যুদ্ধবিরতি: বাজিমাত করল এরদোয়ানের তুরস্ক

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লড়াই চলার পর শান্তির মুখ দেখতে যাচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়াসহ পুরো বিশ্ব। সংঘাত বন্ধে বিশ্ব মোড়লরা হুমকি-ধামকি আর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়াকে থামানোর চেষ্টা করলেও তাতে কাজ হয়নি। এবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় শান্তির পথে হাঁটছে দেশ দুটি।

ইউক্রেন-রাশিয়া বৈঠকে এরদোয়ান

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হামলা শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশগুলো যুদ্ধ বন্ধে হুমকি-ধামকির পথ অবলম্বন করে। হাজার হাজার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় রাশিয়ার ওপর। কিন্তু তেল-গ্যাসের মতো অস্ত্র হাতে থাকায় কোনো কিছুকেই পরোয়া করেনি রাশিয়া। উল্টো নানা কৌশলে ইউরোপীয় দেশগুলোকেই সংকটের মুখে ফেলে দেয়। এমনকি ইউরোপের বেশ কিছু দেশ সরাসরি জানিয়ে দেয়, রাশিয়ার তেল-গ্যাসের কোনো বিকল্প তাদের হাতে নেই। অর্থাৎ ইচ্ছে করলেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেতে পারছে না তারা।

বিষয়টি জাতিসংঘে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও রাশিয়া ভেটো পাওয়ার ব্যবহার করে তা ঠেকিয়ে দেয়। আবার কোনো কোনো দেশের সাথে বাণিজ্য অব্যাহত রাখে ডলার-ইউরোকে পাশ কাটিয়ে। ফলে রাশিয়াকে আটকানোর কোনো সূত্রই কাজে লাগছিল না সেভাবে। এমনকি বেলারুশে চার দফা বৈঠকেও শান্তির পথ খোলেনি।

ইউক্রেন-রাশিয়া বৈঠক

কিন্তু তুরস্কে গতকাল মঙ্গলবার রাশিয়া-ইউক্রেনের আলোচনা শুরুর পরেই দেখা যায় নাটকীয় পরিবর্তন। যুদ্ধের ৩৪তম দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও চেরনিহিভ শহর দখলের অভিযানে আপাতত রাশ টানতে সম্মত হয় ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ।

মূলত ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদান ইস্যুতেই সংকটের সূত্রপাত হলেও ন্যাটোরই সদস্য তুরস্কের মাধ্যমে পুতিন ইউক্রেন দখলের অভিযানে সাময়িক ইতি টানতে রাজি হলেন।

শুধু এবারই নয়, দেড় বছর আগেও একইভাবে মস্কোর ওপর আঙ্কারার ‘প্রভাব’ দেখা গিয়েছিল। ২০২০ সালের শেষে নগোর্নো কারাবাখের দখল ঘিরে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধের সময় প্রকাশ্যে আজেরবাইজানকে সামরিক সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। সে সময় পুতিনের সমর্থন ছিল আর্মেনিয়ার দিকে। তারপরও দুই মাসের যুদ্ধে আর্মেনিয়া কোণঠাসা হয়ে শান্তির পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছিল।

কারো কারো মতে, রাশিয়ার ওপর তুরস্কের এই প্রভাবের পেছনে রয়েছে ভৌগোলিক অবস্থান। আবার অনেকে মনে করেন, সবচেয়ে বেশি অবদান বর্তমান বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নেতা এরদোয়ানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার। গত কয়েক বছরে নানা দিক দিয়েই তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বিভিন্ন ইস্যুতে ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে সব পক্ষের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন। এবারেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ অন্য দেশগুলো দুই পক্ষের কারোই আস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি। রাশিয়ার কাছে তো নয়ই, এমনকি ইউক্রেনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এবং প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র দেয়ার পরও জেলেনস্কির সমীহ আদায় করতে পারেনি তারা। ফলে তারা এ সংঘাত বন্ধ বা হ্রাসে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি। বরং কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, তাদের এসব অস্ত্রের কারণেই রাশিয়া হামলা তীব্রতর করেছে। এমনকি তারা ঘোষণাও দিয়েছিল, বিদেশ থেকে অস্ত্র সাহায্য দেয়া হলে তার ওপরই হামলা চালাবে রাশিয়া।

তুরস্কের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ডনবাসকে ‘স্বশাসন’ দেওয়ার রুশ প্রস্তাব বিবেচনায় রাজি হয়েছে কিয়েভ। এ ছাড়া ২০১৪ সালের যুদ্ধে ইউক্রেনের হাত থেকে বেদখল হওয়া ক্রিমিয়াকে তাদের দেশের অংশ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হোক বলেও দাবি করেছিলেন পুতিন। সে বিষয়েও ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছে। আলোচনায় ক্রিমিয়ার পথে পশ্চিম ইউরোপে রুশ গ্যাস পাইপলাইন বসানোর প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে তুরস্ক সরকারের একটি সূত্র।