জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের পক্ষে ব্রিটিশ আদালতের রায়

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে বিচারের মুখোমুখি হতে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণের অনুমোদন দিয়েছে ব্রিটেনের একটি আদালত। উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতার ভাগ্য এখন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। খবর এপি’র।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

বুধবার ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেটস কোর্টে সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে ডিস্ট্রিক্ট জজ পল গোল্ডস্প্রিং বলেন, প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্তটি ব্রিটিশ সরকারের এখতিয়ারের বিষয়। বেলমার্শ কারাগারে আটক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ তখন ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে আদালতের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। এসময় অ্যাসাঞ্জের মুক্তির দাবিতে আদালতের বাইরে স্লোগান দিচ্ছিল কয়েকশ মানবাধিকার কর্মী।

ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির সরকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবেন বলে জোর আশঙ্কা করছেন মানবাধিকার কর্মীরা। ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অ্যাসাঞ্জের আপিলের সুযোগ থাকলেও তাতে খুব আশার কিছু দেখা যাচ্ছে না। কারণ, গত মাসে খোদ ব্রিটেনের সুপ্রীম কোর্ট প্রত্যর্পণের পক্ষে দেওয়া নিম্ন আদালতের একটি রায়ের বিরুদ্ধে অ্যাসাঞ্জের আপিলের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে।

এক দশকেরও বেশি সময় আগে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভিডিওচিত্র প্রকাশ করলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, অমানবিক নির্যাতনসহ নানা অপরাধের ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় ব্যাপক নিন্দার শিকার হয় মার্কিন সেনাবাহিনী। এরপর অ্যাসাঞ্জের প্রকাশনা উইকিলিকস যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ গোপনীয় তারবার্তা প্রকাশ করলে কূটনেতিকভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় মার্কিন সরকার।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির ১১টি ও কম্পিউটার অপব্যবহারের একটি অভিযোগ এনেছে। মার্কিন কৌসুলীদের অভিযোগ, অ্যাসাঞ্জ বেআইনিভাবে মার্কিন সেনাবাহিনীর কম্পিউটার অ্যানালিস্ট চেলসিয়া ম্যানিংকে গোপনীয় কূটনৈতিক তারবার্তা চুরিতে সহায়তা করেছেন। পরবর্তীতে এসব তারবার্তা উইকিলিকসে প্রকাশ করা হয়।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সমর্থকদের যুক্তি হলো, তিনি সাংবাদিক হিসেবে ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীর অন্যায় কর্মকাণ্ড প্রকাশের জন্য যা প্রয়োজন তা করেছেন। সাংবাদিক হিসেবে তিনি মার্কিন সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে উল্লিখিত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আওতায় সুরক্ষার দাবিদার। অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মার্কিন কর্তৃপক্ষের মামলাগুলো ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে সমর্থকরা অভিযোগ করেন। তাদের আশঙ্কা হলো, বিচারের অজুহাতে মার্কিন সরকার অ্যাসাঞ্জকে হাতে পেলে তাকে আজীবন কারারুদ্ধ রাখবে।

ডিস্ট্রিক্ট জজ আদালতের সবশেষ এ আদেশের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের হাত থেকে বাঁচতে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের কয়েক বছরের লড়াই চুড়ান্ত পরিণতির কাছাকাছি পৌঁছে গেল বলে ধরে নেওয়া যায়। যদিও এখনো প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনের জন্য অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীদের হাতে চার সপ্তাহ সময় আছে। এরপর তারা প্রয়োজনে হাইকোর্টেও আবেদন করতে পারেন।