শ্রীলঙ্কা সংকট: থাকবেন কে, নাকি দুই ভাই-ই?

শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দেশটির জনগণের চাওয়া আর ক্ষমতাসীনদের রাজনীতির মারপ্যাঁচে টিকবেন কে, নাকি থাকবেন দুই ভাই-ই। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের পতন কিংবা ক্ষমতা লোপ- জনগণের এমন দাবিকে লুফে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধির এমন সুযোগ হাতছাড়াও করা হলো না, আবার নিজের ভাইকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকেও সরাতে হলো না- এমন কারসাজি নিয়েই এগোচ্ছেন মাহিন্দা। ডেইলি মিরর।

গোতাবায়া রাজাপাকসে ও মাহিন্দা রাজাপাকসে

বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারি দল এবং এর জোট সদস্যদের মধ্যে গুরুতর রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তা কেটে যেতে পারে আজই। বিরোধী সদস্যদের অনেকেই বলছেন, জনসাধারণের দাবি পূরণে অবশ্যই প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ করা উচিত। সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগও চেয়েছেন কেউ কেউ।

দু’ভাইয়ের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের অঘোষিত দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সাম্প্রতিক মন্ত্রিসভা নিয়োগ এবং সব রাজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ শুধু প্রেসিডেন্টের মাধ্যমেই হয়েছিল। এ নিয়ে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছিল প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর। কারণ এসব নিয়োগের সময় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেওয়া হয়নি, এমনকি তিনি শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও যোগ দেননি।

আর প্রেসিডেন্টের একচ্ছত্র আধিপত্য ভাঙতে জনগণের ‘ইচ্ছাপূরণ’কে পুঁজি করে তারই প্রতিশোধ নিতে যাচ্ছেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। তবে এ ক্ষেত্রে ভাইকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে যাননি তিনি। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, আইন সভা এবং বিচার বিভাগের ইতিবাচক দিকগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের ক্ষমতা কমিয়ে আনা হবে এবং সংসদকে আরও ক্ষমতাবান করা হবে। মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, মাহিন্দা রাজাপাকসে বলেছেন, তিনি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। সরকার গঠনের জন্য বিভিন্ন মহলের অনুরোধের ওপর ভিত্তি করে তিনি একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করবেন।

সেই লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের নতুন প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। এর আগের দিনই এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করছি, সংশোধিত সংবিধান জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। সেই হিসেবে শ্রীলঙ্কান সংবিধানের ১৯তম সংশোধনীই বলে দেবে, ক্ষমতায় থাকছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া, সেইসঙ্গে সংসদের মাধ্যমে আরও ক্ষমতাবান হবেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।

খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া ১৯তম সংশোধনী আলোচনা নিয়ে আজ সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে সংসদ। আলোচনা হবে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ করা উচিত কি-না, সে বিষয়েও। যদি প্রেসিডেন্টের পদত্যাগে ঐকমত্য হয়, তাহলে আজকের মধ্যেই সিদ্ধান্তটি স্পিকারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা। পরে তা প্রেসিডেন্টকে জানানো হবে।

তবে প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করবেন, নাকি দুই ভাই-ই দেশের শীর্ষ দুটো পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন- সেটাই দেখার বিষয়। শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার জন্য অভিযোগের আঙুল এখন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের দিকে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৯ সালে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর গোতাবায়া বড় ধরনের কর হ্রাস ও আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো যেসব নীতি প্রণয়ন করেছেন, সেগুলো এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।

তাছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে পরিবারতন্ত্র। চারটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করেন রাজাপাকসে পরিবারের চার ভাই। দেশটির ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের জন্য ব্যাপক জনরোষ তৈরি হয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রের এই পরিবারটির বিরুদ্ধে।