ইমরান খানের ‘হেলিকপ্টার বিলাসিতা’ খুঁজে পেল নতুন সরকার!

সাড়ে তিন বছর পাকিস্তান শাসন করেছেন ইমরান খান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট। ক্ষমতা হারিয়েছেন গত ১০ এপ্রিল। এই সময়ে তার হেলিকপ্টার বিলাসিতায় সরকারি কোষাগার থেকে উড়িয়েছেন প্রায় ৯৮০ মিলিয়ন রুপি ( প্রায় ৪৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা)। দ্য ডন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, ছবি- ডন

পাক সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, হেলিকপ্টারে এক ঘণ্টার যাত্রায় প্রতি ঘণ্টায় খরচ হয় প্রায় দুই লাখ ৭৫ হাজার রুপি। তার বাসভবন বানিগালা থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। শুধু অফিসে যাতায়াতের ক্ষেত্রেই তার হেলিকপ্টারের জ্বালানি খরচ ছিল ৫৫০ মিলিয়ন রুপি বা প্রায় ২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রতিদিনের গড় খরচ ছিল ৮ লাখ রুপি। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল বুধবার প্রমাণসহ এসব তথ্য প্রকাশ করেন।

ক্ষমতায় আসার পরপরই খান তার প্রতিদিনের যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করায় ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। সেই সমালোচনা থেকে ইমরানকে বাঁচাতে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী দাবি করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের খরচ মাত্র ৫৫ রুপি। এই দাবির বিপক্ষে তথ্য-প্রমাণাদি হাতে নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ‘হেলিকপ্টার বিলাসিতা’র পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন মিফতাহ ইসমাইল।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে ধ্বংস করেছেন ইমরান খান। তার শাসনামলের শেষ দিকে জ্বালানি তেলে মাসিক ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১৫০ বিলিয়ন রুপি। আর এটাই বর্তমান সরকারের জন্য বড় উদ্বেগ এবং নাশকতার ফাঁদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী। এই সঙ্কট শাহবাজ সরকারের জন্য শাখের করাত হিসেবে চোখ রাঙাচ্ছে। কারণ, এ অবস্থায় এত বড় ভর্তুকি নিয়ে কোনো বাজেট তৈরি করা সম্ভব নয়। আর ভর্তুকি কমাতে হলে তেলের দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই। সেটা করলেই পাক জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে।

পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ক ফেডারেল মন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইমরান তার শাসনামলে হেলিকপ্টারে ভ্রমণ করেছেন দুই হাজার ৭২৩ ঘণ্টা। ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকারকে অর্থনৈতিক সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লে­খ করে তিনি আরও বলেন, ‘ইমরান খান তোশাখানা থেকে যে অর্থ উপার্জন করেছেন- তা তার সারা জীবনের উপার্জনের চেয়ে বেশি।’ তিনি অভিযোগ করেন, ইমরান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে ব্যবসার জন্য ব্যবহার করেছেন।

এই মন্ত্রী দাবি করেন, ইমরান ক্ষমতা গ্রহণের পর উপহার কেনা-বেচার ব্যবসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে যা কিছু উপহার পাওয়া যায়- তা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর, কোনো ব্যক্তির নয়। অতএব, আপনি ২০ শতাংশ দামে সেই উপহারগুলো কিনে চারগুণ বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন না।’

মরিয়ম অভিযোগ করেন, ইমরানের সম্পদ প্রথম দুই বছরে ২০ মিলিয়ন রুপি থেকে ৮৫ মিলিয়ন রুপি। তার সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে তার সম্পদের মূল্যমান দাঁড়িয়েছে ১৪২ মিলিয়ন রুপিতে। তিনি বলেন, মিথ্যাচার ছাড়াও মূল্যস্ফীতি, ঋণ, বেকারত্ব, পররাষ্ট্রনীতি, প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে ইমরানের অক্ষমতা সবাই দেখেছে।