বারবার আল আকসায় সংঘর্ষের নেপথ্যে

আল আকসা মসজিদ মুসলমানদের জন্য একটি পবিত্র স্থান। এটি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘর্ষের হটস্পট হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, ইহুদিরা এটিকে সবচেয়ে পবিত্র স্থান ‘টেম্পল মাউন্ট’ মনে করেন। গত শুক্রবার থেকে জেরুজালেমের এই মসজিদকে ঘিরে সংঘর্ষে ১৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। রোববারও মসজিদ প্রাঙ্গণে ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এদিন আহত হয়েছেন ২০ জনেরও বেশি মানুষ।

আল আকসা মসজিদে মুসল্লিদের ওপর দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা, ফাইল ছবি

ফজরের নামাজের সময় মসজিদ কম্পাউন্ডে ইসরায়েলি পুলিশের হানা ছিল বর্বরোচিত। তা-ও পবিত্র রমজান মাসে। এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম নয়, প্রায়ই আল আকসা মসজিদকে ঘিরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। কেন এমনটি হচ্ছে? সে বিষয়েই বিস্তারিত ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে ফার্স্ট পোস্ট।

আল আকসার তাৎপর্য: আল আকসা হলো ৩৫ একর জায়গার ওপর স্থাপিত একটি সীসা-গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদের নাম- যা মুসলমানদের কাছে আল হারাম আল শরিফ হিসেবে পরিচিত। এটি ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান। এর কম্পাউন্ডে রয়েছে ডোম অব দ্য রক (পাথরের আশ্রয়), চারটি মিনার, কম্পাউন্ডের ঐতিহাসিক গেট এবং সুবিশাল মসজিদ। ইহুদিরা এটিকে বলে টেম্পল মাউন্ট- যা ইহুদি ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র স্থান। মসজিদটি যে পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে- সেটি জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে অবস্থিত। এটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।

ইহুদিরা যা বিশ্বাস করে: ইহুদিরা বিশ্বাস করে টেম্পল মাউন্ট যেখানে, সেখানে দুটি প্রাচীন ইহুদি মন্দির ছিল। যার একটি নির্মাণ করেছিলেন রাজা সলোমন (সুলাইমান আ.) এবং সেটি ধ্বংস করেছিল ব্যবিলনীয়রা। আর দ্বিতীয় মন্দিরটি ধ্বংস করেছিল রোমানরা। যাই হোক, ইহুদি আইন এবং ইসরায়েলি নিয়মানুযায়ী এই কম্পাউন্ডের ভেতরে প্রার্থনা করতে নিষেধ করা হয়। কারণ, তাদের ধারণা- এই পবিত্র স্থানটিকে পদদলিত করা অপমানজনক। তারা আরও বিশ্বাস করে, এই নিদর্শন থেকেই বিশ্ব সৃষ্টির গোড়াপত্তন হয় এবং ঈশ্বর এখানে তার পূর্ণ উপস্থিতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

মুসলমানরা যা বিশ্বাস করে: আরবি ভাষায় আল আকসার দুটি অর্থ রয়েছে। প্রথমটি ‘সর্বাধিক দূরত্বে’- পবিত্র কুরআনের সূত্র অনুযায়ী যা মক্কা থেকে এর দূরত্বকে বোঝায়। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে ‘সর্বোচ্চ’- যা মুসলমানদের মধ্যে এর মর্যাদাকে চিহ্নিত করে। মুসলমানরাও বিশ্বাস করেন এই সেই স্থান, যেখানে সবশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মক্কা থেকে জেরুজালেম পর্যন্ত এক অলৌকিক রাতের যাত্রার প্রার্থনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পবিত্র কুরআন অনুযায়ী, নবীজিকে রাতের বেলায় মক্কার পবিত্র মসজিদ থেকে দূরতম মসজিদে (আল আকসায়) নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকেই এই বিশ্বাস তৈরি হয় যে, নবী মুহাম্মদ সা. বেহেশতে আরোহণ করেছিলেন- যাকে বলা হয় শবে মেরাজ।

দ্বন্দ্ব: ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে তৎকালীন ব্রিটিশদের অধীনে দুটি রাষ্ট্রে বিভক্ত করার একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিল- একটি ইহুদিদের জন্য এবং একটি ফিলিস্তিনিদের জন্য। ইসরায়েল রাষ্ট্রের ঘোষণার পর ১৯৪৮ সালে প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ হয়।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সে সময় ইসরায়েল প্রায় ৭৮ শতাংশ ভূমি দখল করে এবং পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজার অবশিষ্ট এলাকা মিশরীয় ও জর্ডানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করলে ১৯৬৭ সালে সিরিয়া, মিশর এবং জর্ডানের সঙ্গে ছয় দিনের একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আর তখনই জেরুজালেম এবং আল আকসা দখল করে ইসরায়েলিরা।