এবার ভোজ্য তেল রেশনিংয়ের ঘোষণা দিল টেসকো

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ব্রিটিশ নাগরিকদের রসুইঘরে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি দেখা দিয়েছে সরবরাহ সংকট। এ কারণে রান্নায় ব্যবহৃত সব ধরনের তেল রেশনিংয়ের ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটেনের বৃহত্তম রিটেইলার টেসকো। এখন থেকে টেসকোর আউটলেটে ক্রেতারা একসঙ্গে তিন বোতলের বেশি ভোজ্য তেল কিনতে পারবেন না। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি দেখা দিয়েছে সরবরাহ সংকট

ব্রিটেনে রান্নায় বহুল ব্যবহৃত সূর্যমুখী তেলের সিংহভাগ আসে ইউক্রেন থেকে। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন থেকে রপ্তানি থেমে যাওয়ায় ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা হন্যে হয়ে ভোজ্যতেলের বিকল্প উৎস খুঁজছেন। সূর্যমুখী ও অন্যান্য ভেজিটেবল অয়েলের মূল্য এরইমধ্যে একবছর আগের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে। ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেড়ে গেছে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইসহ হরেক রকমের ভাজাপোড়া ও চিপস আইটেমের দাম।

টেসকো বলেছে তাদের কাছে ভোজ্য তেলের মজুত আছে। তবে কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে কয়েকটি ভেজিটেবল অয়েল আইটেমের স্টক ফুরিয়ে গেছে।

এর আগে ব্রিটেনের অন্য দুই রিটেইলার মরিসনস ও ওয়েইট্রস ভোজ্য তেল রেশনিংয়ের ঘোষণা দেয়। এ দুটি কোম্পানির আউটলেটে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই বোতল ভোজ্য তেল কিনতে পারছেন। প্রভাবশালী অপর দুটি রিটেইল চেইন সেইন্সবারি ও আসডা এখনও এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

বিস্কুট, মেয়নেজ থেকে শুরু করে শত শত তৈরি খাবার আইটেমে সূর্যমুখী তেল ব্যবহৃত হয়। ব্রিটেনের পাবগুলোতে বিক্রির জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রিসপ আইটেম তৈরি করে দ্য ব্রিটিশ স্ন্যাক কোম্পানি। এর প্রতিষ্ঠাতা টম লক বলেন, স্ন্যাক্স আইটেমের জন্য আদর্শ হলো সূর্যমুখী তেল। এ মুহূর্তে কোনো পরিমাণেই সূর্যমুখী তেল পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা আগস্ট পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়ার মতো সরিষা কিনেছি। কিন্তু সরিষা কিনতে যে দাম দিতে হচ্ছে তা একবছর আগে সূর্যমুখী তেলের দামের তিন গুণ।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন করে নির্দেশনা জারি করেছে ব্রিটেনের খাদ্যমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুড স্ট্যান্ডার্ডস এজেন্সি (এফএসএ)। সংস্থাটি বলেছে, সরবরাহকারকরা প্রয়োজনবোধে সূর্যমুখী তেলের পরিবর্তে সরিষা তেল ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে খাবারের মোড়কে ও স্টিকারে পরিবর্তিত রেসিপি উল্লেখ করতে হবে।

এদিকে পাম অয়েলের বৃহত্তম উৎপাদক ইন্দোনেশিয়া শুক্রবার ভোজ্য তেল রপ্তানি নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। তেল উৎপাদনের উপকরণ রপ্তানিও নিষিদ্ধ করছে দেশটি। স্থানীয় বাজারে সরবরাহ সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে জনবিক্ষোভের মুখে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো এ ঘোষণা দিয়ে বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে পাম অয়েল ও পাম রপ্তানি নিষিদ্ধ হবে এবং অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।

ব্রিটেনে ভোজ্য তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কেটিসি এডিবলস-এর গ্যারি লিউয়িস বলেন, যুদ্ধপূর্ব সময়ের তুলনায় ভোজ্য তেলের দাম এখনও অনেক চড়া। কোভিড ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ফলন ব্যাহত হওয়া, জৈব জ্বালানি তৈরির জন্য তেলের চাহিদা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে বাজার স্বাভাবিক হতে পারছে না। দাম এখনও অনেক বেশি এবং এর কারণে বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।