মাউন্ট এভারেস্টেও ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা!

আং সারকি শেরপা। বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক চাকরি তার। কিন্তু ঝুঁকি নিয়েই তিনি চাকরি করে থাকেন। শেরপা নেপালের অত্যন্ত অভিজ্ঞ একজন পর্বত গাইড, যাদের বলা হয় ‘আইসফল ডাক্তার’। তারা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বত মাউন্ট এভারেস্টে আরোহীদের জন্য দড়ি এবং অ্যালুমিনিয়ামের মই ঠিক করেন।

এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার চেষ্টা

তিনি বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এভারেস্টেও পড়ছে। মহামারিকালের মতো পর্বতারোহী কমছে। বিবিসি।

শেরপাদের কাজ হল- ক্রমাগত হিমবাহের বরফ স্থানান্তর করা। প্রতিবছর নেপালের দিক থেকে শত শত পর্বতারোহী এভারেস্টে ওঠার চেষ্টা করে। আর তাদের সফলতার পেছনে শেরপার মতো চাকুরের অবদান রয়েছে। তারা বেস ক্যাম্প থেকে কাজ শুরু করে এবং তা এপ্রিল ও মে মাস পর্যন্ত গড়ায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলো বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। এভারেস্টে মারাত্মক তুষারপাতের পর ২০২০ সালে আঘাত হানে করোনা, যা পর্বতারোহীদের দূরে রেখেছিল। এখন ইউক্রেনের যুদ্ধ আবারও মহামারির মতো অবস্থা সৃষ্টি করছে। পর্বতারোহীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

২০২০ সালে কোভিড আঘাত হানার পরের বছর নেপাল এভারেস্টে আরোহনের অনুমতি দেয়। এসময় ৪০৮ জনকে চূড়ায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয় মাত্র ২৮৭ জনকে অনুমোদন দিয়েছে পর্বতারোহনের।

দেশটির পর্যটন বিভাগের পর্বতারোহণ শাখার পরিচালক সূর্য প্রসাদ উপাধ্যায় বলেছেন, এই যুদ্ধ রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে আসা পর্বতারোহীদের প্রভাবিত করেছে। এভারেস্টের জন্য আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত মাত্র একজন ইউক্রেনীয় পর্বতারোহী আছে।

১৭ রাশিয়ানকে এভারেস্ট আরোহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্যরা বাতিল করেছে। রুশ হামলার পর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো তাদের অর্থনীতিকে আঘাত হানায় রাশিয়ানরা তাদের মুদ্রা, রুবল এবং বিদেশে মুদ্রা পেতে ব্যাপক অসুবিধার মুখে পড়েছে।

সূর্য প্রসাদ বিবিসিকে বলছেন, মাউন্ট এভারেস্ট বিপজ্জনক অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। সেখানে তুষারপাতের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ফাটল। আপনি যদি সতর্ক না হন তবে আপনি ফাটলের মধ্যে পড়ে যেতে পারেন। এমনকি আপনি যদি দড়ি দিয়ে পথ তৈরি করেন তবে তা এক মাস পরে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।

শেরপা স্থানীয় গাইডদের ছয় সদস্যের একটি দলের নেতৃত্ব দেন, পরিদর্শন করার সময় যারা বিবিসিকে সহায়তা করেছির। চা পান করার সময় তাদের তাঁবুর চারপাশে দড়ি এবং মই বিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদের আশেপাশে বেস ক্যাম্পের তৎপরতা ছিল। বসন্ত মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন অভিযানের উন্নত দল তাঁবু স্থাপন এবং সরবরাহের ব্যবস্থা করছিল।

আইসফল ডাক্তাররা সবচেয়ে নিরাপদ পথ চিহ্নিত করে এবং ক্যাম্প ওয়ান এবং টু পর্যন্ত দড়ি ঠিক করে। অন্য একটি দল ওপরে এবং শিখর পর্যন্ত কাজ করে। শেরপা এবং তার সহকর্মীরা বিপদ সম্পর্কে খুব সচেতন। তাদের রয়েছে জীবনের ঝুঁকিও।

২০১৪ সালে খুম্বু বরফপ্রপাতের ওপরে একটি তুষার ধসে ১৬ জন শেরপা মারা গিয়েছিল। দড়ি ঠিক করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এক বছর পর একটি প্রচণ্ড ভূমিকম্পের ফলে মারা যায় ১৯ জন পর্বতারোহী।