‘ভুতুড়ে সিস্টেমে’ উল্টো বেড়েছে রাশিয়ার তেল রপ্তানি!

দুই মাস আগে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। তার জেরে বিশ্বের কোনো দেশ রাশিয়ার তেলের আমদানি-রপ্তানিতে, আবার কেউ ব্যাংকিং সিস্টেমে, আবার কেউ জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে এটাও সত্য, রাশিয়ার তেল-গ্যাসের প্রয়োজন রয়েছে প্রায় সবার। সম্প্রতি জানা গেছে, রাশিয়ার তেল বিক্রি অব্যাহত রয়েছে শুধু নয় বরং আগের চেয়ে বেড়েছে। আর এই কার্যক্রম চলছে অনেকটা ভুতুড়ে সিস্টেমে। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

রুশ তেলের ট্যাঙ্কার, ফাইল ছবি

ট্যাঙ্কার ট্রাকার্স ডট কমের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, রাশিয়ার বন্দরগুলো থেকে প্রতিদিন ১৬ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি হচ্ছে, যা মার্চ মাসের তুলনায় তিন লাখ ব্যারেল বেশি। ওই মাসে রাশিয়া থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৩ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি হয়েছে।

তবে কেপলার নামে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের মতে, মার্চে রাশিয়া থেকে যেখানে প্রতিদিন ১০ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি হয়েছে, সেখানে চলতি এপ্রিলে প্রতিদিন গড়ে ১৩ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি হচ্ছে। অর্থাৎ আগের তুলনায় তেল রপ্তানি বেড়েছে নিশ্চিতভাবে।

যুদ্ধ যেমনই চলুক, রাশিয়ার তেল-গ্যাসের ব্যবসা থেমে নেই

রাশিয়ার বন্দর থেকে তেল রপ্তানি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এই তেল কোথায় যাচ্ছে, কারা কিনছে- তা নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, রাশিয়ার বন্দর থেকে অপরিশোধিত তেলভর্তি জাহাজগুলো অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। এরপর ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা পথিমধ্যেই সে তেল কিনে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে নেন।

জানা গেছে, চলতি এপ্রিল মাসে এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ১১ লাখ ব্যারেল তেল বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে জাহাজগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো নির্দিষ্ট রুটে যাত্রা করেনি। প্রতিদিনই এ প্রক্রিয়ায় লাখ লাখ ব্যারেল তেল বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তেল বিক্রির এই পরিমাণ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগের পরিমাণের চেয়ে বেশি।

ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পরের মার্চ মাসের প্রথম দিকেই রাশিয়ার তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকা। বাইডেন প্রশাসন চেয়েছিল, তাদের মতো অন্য দেশগুলোও এককথায় রাশিয়ার তেল বর্জন করবে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা দেখা যায়নি।

ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার কাছ থেকে তাদের চাহিদার শতকরা ২৭ ভাগ তেল আমদানি করে। হঠাৎ করেই ভিন্ন কোনো উৎস থেকে এ পরিমাণ তেল বর্তমান মূল্যে সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। ফলে ইউরোপের অনেক দেশ রাশিয়ার হামলার বিরোধিতা করলেও তেলের প্রশ্নে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে রাজি নয়।

রাশিয়ার মাথায় সে বিষয়টি ভালোভাবেই রয়েছে। সুতরাং এ পর্যন্ত শত আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও ভ্রুক্ষেপ করতে দেখা যায়নি দেশটিকে বরং তেল-গ্যাসকে অস্ত্র বানিয়ে বিভিন্ন দেশকে হুমকি দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। গত সপ্তাহেও তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি ভিন্ন হলে ইউরোপের বাজার থেকে অপরিশোধিত তেল এশিয়ার বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।