মোদির প্রথম সফর ঘিরে উত্তপ্ত কাশ্মির!

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কাশ্মির। মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলটির স্বাতন্ত্র্য মর্যাদা সংক্রান্ত ৩৭০ ধারা সংবিধান থেকে বিলোপের পর এই প্রথম কাশ্মির সফরে গেলেন তিনি। প্রথম সফরেই রোববার মোদির সভাস্থল থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কড়া নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয় গোটা এলাকা। কাশ্মিরের উন্নয়নের স্বার্থে একাধিক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন তিনি।

জম্মু-কাশ্মির সফরে গিয়ে ভাষণ দেন নরেন্দ্র মোদি

এরমধ্যে ২০ হাজার কোটি রুপির বানিহাল-কাজিগুন্দ সুড়ঙ্গ এবং দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মোদি। যা জম্মু ও কাশ্মির দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে।

মোদির সফর উপলক্ষে রোববার কড়া নিরাপত্তায় মোড়ানো হয় সারা রাজ্য। তারপরও সফরের দিন সকালে জম্মুর লালিয়ানা গ্রামে এক কৃষিজমিতে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। প্রথমে বিষয়টি নজরে আসে গ্রামবাসীদের। বিস্ফোরণের শব্দের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে এই ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি কার্যকলাপের কোনো যোগ নেই। এএনআই সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, পুলিশ সন্দেহ করছে বজ্রপাত বা উল্কাপাত হয়েছে। স্থানীয় সময় ৩টার দিকে মঞ্চে ওঠেন মোদি। সামনে হাজার হাজার মানুষ।

বক্তব্যের প্রথমেই তিনি বলেন, এই অঞ্চলটি আমার জন্য নতুন নয়, আমিও আপনার জন্য নতুন নই। এরপরই কাশ্মিরে তার সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরেন। ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টিকে কটাক্ষ করে মোদি বলেন, ছয় দশকে এই অঞ্চলে মাত্র ১৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আর দুই বছরে আমরা ৩৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। কংগ্রেস বা বিজেপির সঙ্গে এর আগে জোট করে এই রাজ্য শাসন করেছিল দুই দলই।

বিজেপি মেহবুবা মুফতির পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে ক্ষমতাসীন জোট ভেঙে দেওয়ার পর ২০১৮ সাল থেকে জম্মু ও কাশ্মির রাষ্ট্রপতি শাসনের অধীনে রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর এবং এটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করার প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় পর মোদি এই রাজ্যে সফরে এলেন।

স্বাভাবিকভাবেই মোদির এই সফরের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও কঠোর করা হয়েছে। এদিন দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন নরেন্দ্র মোদি। যার একটি হলো কিশতওয়ারের চেনাব নদীর ওপর ৮৫০ মেগাওয়াট সুবিধাযুক্ত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, যা প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে। অন্যটি হলো ৫৪০ মেগাওয়াটের কোয়ার জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, ওই একই নদীর ওপর ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে নির্মিত হবে এটি।

অন্যদিকে, ভারতের প্রতিটি জেলায় ৭৫টি জলাশয়ের বিকাশ ও পুনরুজ্জীবনের জন্য ‘অমৃত সরোবর’ নামে একটি উদ্যোগেরও সূচনা করা হয় রোববার। ৮.৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বানিহাল-কাজিগুন্ড টানেল ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে। এই টানেল দুটি স্থানের মধ্যকার রাস্তার দূরত্ব প্রায় ১৬ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে, যার ফলে সফরে সময় লাগবে আগের চেয়ে দেড় ঘণ্টা কম।