পুতিনের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের ঘন্টাব্যাপী বৈঠক

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ থামাতে তুরষ্কের মধ্যস্থতায় ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অনেকটুকু অগ্রগতি হয়েছিল, কিন্তু বুচায় রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক ও মিথ্যা অভিযোগ আরোপের পর তা থেমে গেছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘন্টাব্যাপী বৈঠক করেন জাতিসংঘ মহাসচিব

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মঙ্গলবার মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘন্টাব্যাপী বৈঠকে মিলিত হন। এর মধ্যে বেশ খানিকটা সময় দুই নেতা একান্তে কথা বলেন।

বৈঠকে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ইউক্রেনের পরিস্থিতিতে রাশিয়ার মাথাব্যথার কারণ আছে এটা আমি বুঝি। ইউরোপে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও রাশিয়ার উদ্বেগ সম্পর্কে আমরা অবহিত।

এ সময় রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনে সমস্যা শুরু হয় ২০১৪ সালের অভ্যূত্থানের পর। সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য মিনস্ক-২ চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু তারপরও দোনবাস অঞ্চলের মানুষকে অবরুদ্ধ ও সামরিক জবরদস্তির মুখে রাখা হয়। দোনবাসে গণহত্যা থামানোর জন্য রাশিয়া দোনেতস্ক প্রজাতন্ত্র ও লুহানস্ক প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।

তিনি বলেন, কসোভো ইস্যুতে জাতিসংঘ আদালতের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে কোনো অঞ্চল বা এলাকা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের সম্মতি ছাড়াই সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করতে পারবে। পশ্চিমের অনেক দেশ কসোভোকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দোনেতস্ক ও লুহানস্কের ক্ষেত্রে রাশিয়া তা-ই করেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, এই মুহূর্তে মারিওপলে বিপন্ন মানুষের জন্য সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পক্ষ থেকে সাড়া পাবার অপেক্ষায় রয়েছে জাতিসংঘ। ইউক্রেন ইস্যুতে কিয়েভ, মস্কো, জাতিসংঘ ও রেড ক্রসের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি মানবিক বিষয়াদি সংশ্লিষ্ট কন্টাক্ট গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, দুই-তিনদিনের মধ্যে আজভস্টালের পরিস্থিতি নিরূপণে জাতিসংঘ প্রস্তুত রয়েছে। আমরা মারিওপলের বেসামরিক মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার নিশ্চয়তাদাতা হতে চাই।

এ প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, মারিওপলের পরিস্থিতি মর্মান্তিক, তবে সেখানে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। সেখানে এক হাজার তিনশর বেশি ইউক্রেনীয় সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছে।

মারিওপলে মানবিক করিডর চালু রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এক লাখ ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার মানুষ ওইসব করিডর দিয়ে এসেছে। ইউক্রেনীয় বন্দিদের কিভাবে রাখা হচ্ছে রাশিয়া তা জাতিসংঘ ও রেড ক্রস প্রতিনিধিদের দেখাতে চায় বলে তিনি জানান।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, সমস্যা সমাধানে তুরষ্ক যে সংলাপের চেষ্টা চালাচ্ছে, জাতিসংঘ তা সমর্থন করে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধের অবসান হোক।

এ সময় পুতিন বলেন, ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার আলোচনায় বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছিল। কিন্তু এর পরপর বুচায় নাটক সাজিয়ে রাশিয়াকে উসকানি দেওয়া হয়। বুচার ঘটনার সঙ্গে রুশ সেনাবাহিনীর কোনো সম্পর্ক নেই। সেখানে কে কি করেছে আমরা জানি।

জাতিসংঘ সনদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রাশিয়া ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করেছে দাবি করে পুতিন বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় অনীহা দেখায়নি। আমরা এখনও আশা করি কূটনৈতিক উপায়ে সমঝোতা হবে।

ইউক্রেন ক্রাইমিয়া ও দোনবাস ইস্যুতে রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে উল্লেখ করে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, নিরাপত্তা ইস্যুতে চুক্তির আগে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, রাশিয়া সবসময় জাতিসংঘকে সমর্থন দিয়ে যাবে। কারণ আমরা জাতিসংঘকে সর্বজনীন ও অনন্য সংগঠন মনে করি। আমরা বিশ্বাস করি, নিজের স্বার্থমতো কোনো দেশের প্রণীত কাগজপত্র নয়, জাতিসংঘের নথিগুলোই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনার আসল বিধি।

তিনি আরও বলেন, কিছু দেশ যেভাবে সারাবিশ্বে একচেটিয়া অধিকার দাবি করে, রুশ ফেডারেশন তাতে বিস্ময় বোধ করে। অথচ জাতিসংঘ সনদে সব পক্ষকে শক্তি, আকার ও ভৌগলিক অবস্থান নির্বিশেষে সমান বলা হয়েছে।