এরদোয়ানের উদ্যোগে হাতে লেখা কোরআন ‘মাসহাফ’ উন্মোচন

ইসলামের প্রাথমিক যুগে কোরআন সংরক্ষণ করা হয়েছিল হাতে লেখার মাধ্যমে। ঐতিহ্যবাহী সেই ধারা আবারো চালু করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান। পবিত্র লাইলাতুল কদরের দিন ইস্তাম্বুলের গ্র্যান্ড চামলিকা মসজিদে ‘মাসহাফ’ নামে পরিচিত হাতে লেখা কোরআন উন্মোচন করেন তিনি।

‘মাসহাফ’ প্রদর্শনী পরিদর্শন করছেন এরদোয়ান

দীর্ঘ সাত বছরের প্রচেষ্টায় কোরআনের এই প্রতিলিপিটি তৈরি করা হয়। ১৮ শতকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ‘নাক্কাশানে’ ঐতিহ্য অব্যাহত রাখা হয় এর সজ্জায়। মাসহাফের ১০টি খণ্ড। খণ্ডগুলোতে কোরআন লেখা ও ডিজাইনের দায়িত্বে ছিলেন ৬৬ জন বিশেষজ্ঞের একটি দল, যারা তেজিপ (আলোকসজ্জার শিল্প বা সোনা দিয়ে বই অলংকৃত করার শিল্প) থেকে শুরু করে ক্যালিগ্রাফিসহ এ শাখার ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। তারা ইসলামিক মোটিফের সাথে কোরআনের প্রচ্ছদ এবং পৃষ্ঠা ডিজাইনে বিশেষজ্ঞ।

দলটি কোরআন লেখার কাজে ব্যবহৃত কালি থেকে কাগজ পর্যন্ত প্রতিটি উপাদান নিজেরাই তৈরি করে। হস্তলিখিত কোরআনের কপিটিতে প্রাচীন ইসলামী সভ্যতা এবং প্রাথমিক উসমানীয় যুগ থেকে মামলুক সালতানাত ও স্পেনের মুরস পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বইয়ের নকশায় ব্যবহৃত ক্যালিগ্রাফি এবং অন্যান্য শিল্পের প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে।

মাসহাফ প্রদর্শনী

জানা গেছে, নতুন এ সংস্করণটির প্রায় ১ হাজার কপি মুদ্রিত হবে এবং বিশ্বের বিখ্যাত মসজিদ ও গ্রন্থাগারের পাশাপাশি বিশিষ্ট আলেম ও মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে এসব কপি।

ইস্তাম্বুল মাসহাফের সূচনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে এরদোয়ান বলেন, কোরআনের প্রথম আদেশটি হল ‘পড়’ এবং দ্বিতীয় আদেশটি হল ‘লেখ’। অবশ্যই এ দুই আদেশের পেছনে কারণ আছে। উভয় আদেশই মানুষকে শেখায়, যা সে জানে না। এটি আমাদের অস্তিত্ব, জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার উৎসের দিকে নির্দেশ করে।

ইস্তাম্বুলকে ক্যালিগ্রাফির কেন্দ্র আখ্যা দিয়ে তিনি বলে, এর ধারাবাহিকতা আমাদের সভ্যতার শক্তি, আমাদের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা এবং আমাদের ভবিষ্যতের উজ্জ্বলতা ফুটে উঠে। নতুন এ কার্যক্রমের মাধ্যমে অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত আমরা যে সেতুটি তৈরি করেছি তার অন্যতম শক্তিশালী স্তম্ভ এটি।

বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে এরদোয়ান বলেন, বর্তমানে কেবল অতীতের বেদনা, বিপর্যয় ও নৃশংসতা থেকে শিক্ষা নেওয়া যথেষ্ট হবে না, কারণ বিশ্ব আবারও একটি যুগে প্রবেশ করেছে, যাতে বর্ণবাদ, ইসলামোফোবিয়া, বৈষম্যসহ এবং অন্যান্য অপরাধ বাড়ছেই। এটি দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে এ কারণে যে, এ ধরনের দলগুলো এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার হওয়া বা এমনকি ইউরোপীয় দেশগুলিতে নির্বাচনে এককভাবে ক্ষমতায় আসার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

সবশেষে তিনি বলেন, মুসলিম হিসেবে এই খারাপ পরিস্থিতিতে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো- আমাদের বিশ্বাস এবং আমাদের ঐক্য ও সংহতি। এতে ভর করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।