পাকিস্তানে আদালতের নির্দেশ, চালু করতে হবে সুদমুক্ত ব্যাংকিং

পাকিস্তানের ফেডারেল শরিয়া আদালত (এফএসসি) সুদমুক্ত আর্থিক ব্যবস্থা প্রতিস্থাপনে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। দেশটির বিদ্যমান সুদ আইনকে অনৈসলামিক ঘোষণা করে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে রিবা বা সুদভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থাকে ইসলামী ব্যবস্থায় প্রতিস্থাপন করতে বলা হয়েছে। খবর এক্সপ্রেসট্রিবিউন।

পাকিস্তানের ফেডারেল শরিয়া আদালত

প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ নুর মেসকানজাইয়ের নেতৃত্বে এবং বিচারপতি ড. সৈয়দ মুহাম্মদ আনোয়ার ও বিচারপতি খাদিম হুসাইন এম. শেখের সমন্বয়ে গঠিত শীর্ষ ইসলামী আদালতের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় দেয়। রায়ে বলা হয়, সুদমুক্ত থাকা ইসলামী অর্থব্যবস্থার মূল ভিত্তি। ফলে যে ধরনের লেনদেন সুদের আওতায় পড়ে, তা-ই ইসলামে নিষিদ্ধ।

শীর্ষ ইসলামী আদালত রায়ে সরকারকে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথেও সুদমুক্ত লেনদেনের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, সরকারের উচিত প্রতিটি আইন থেকে সুদ শব্দটিই বাদ দেওয়া।

২০২৭ সালের মধ্যে সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থা গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে পাকিস্তানে

বিচারপতি সৈয়দ মুহাম্মদ আনোয়ার রায়ে বলেন, পাকিস্তানে সুদমুক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব। কারণ এরই মধ্যে এটি দেশের কিছু প্রতিষ্ঠান দ্বারা চর্চা করা হচ্ছে। আদালত আরো জানান, পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, পাকিস্তানের ত্রিশ শতাংশ ব্যাংকিং স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের (এসবিপি) কৌশলগত পরিকল্পনার অধীনে ইসলামিক ব্যবস্থায় পরিবর্তিত হয়েছে।

এফএসসির এ সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের পর ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি আবার শরীয়া আদালতে রেফার করে। এরপর সুদের বিরুদ্ধে পিটিশনের ওপর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ১৭ বছর ধরে মামলার শুনানির পর ফেডারেল আদালত বলছেন, সুদমুক্ত ব্যাংকিং সারা বিশ্বেই সম্ভব। সরকার সুদমুক্ত ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে নেতিবাচকতার যেসব প্রভাবের কথা বলেছে, আদালত তার সাথে একমত নয়।

সুদমুক্ত আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ফেডারেল সরকার যুক্তি দিয়েছিল, সুদ নির্মূল করা সম্ভব নয়, কারণ এটি ইতোমধ্যে ভঙ্গুর অর্থনীতিকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তারা বরং বিষয়টি পার্লামেন্টের ওপর ছেড়ে দেওয়ার জন্য আদালতকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

আদালত জানান, সুদ নির্মূল করা পাকিস্তানের জন্য একটি ধর্মীয় ও আইনগত বাধ্যবাধকতা। কারণ পার্লামেন্ট এরইমধ্যে শরিয়াসম্মত আইন প্রণয়নে সম্মত হয়েছে। রায়ে আরো বলা হয়েছে, ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা ঝুঁকিমুক্ত এবং শোষণের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি সমাজ থেকে সুদ নির্মূল ইসলামের অন্যতম মৌলিক নির্দেশ।

আদালত সরকারকে সুদমুক্ত ব্যবস্থার অধীনে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ঋণ গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে জানিয়েছেন, সুদমুক্ত ব্যবস্থা আরো উপকারী হবে। শরীয়ত আদালত আরো বলেন, দেশের পূর্ণ আর্থিক ব্যবস্থাকে একটি ইসলামী ব্যবস্থার দিকে রূপান্তরিত করতে সময় লাগবে তবে ব্যাংকের আমানত তাৎক্ষণিকভাবে সুদ থেকে পরিষ্কার করা যেতে পারে।

আদালত পশ্চিম পাকিস্তান মানি লন্ডারিং আইন এবং ১৮৩৯ সালের সুদ আইনকে শরিয়াবিরোধী ঘোষণা করে। সুদ সহজতর করে এমন সমস্ত আইন ও প্রবিধান অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। আগামী ১ জুন থেকে ‘সুদ’ শব্দটি ধারণ করে এমন সমস্ত আইনি ধারা বাতিল বলে বিবেচিত হবে বলে জানিয়েছেন শরিয়া আদালত।