রাশিয়ার ‘গ্যাস অস্ত্র’ মোকাবেলায় ইউরোপে সৌর জাগরণ!

সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস নিয়ে রুশ রাজনীতির জবাবে নতুন করে নড়েচড়ে বসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ। সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রাশিয়ান গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমানোর তাগিদ দিয়েছেন ২৭ দেশের সংগঠনের নেতারা। রাশিয়ার ‘গ্যাস-অস্ত্র’ মোকাবেলায় তাই শুরু হয়েছে ‘সৌর জাগরণ’। প্রস্তুতিটা আগে থেকেই ছিল। জ্বালানি সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে সৌর বা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল ইউরোপ। এএফপি, গ্লোবাল টাইমস।

জার্মানির জ্বালানি কোম্পানি আরডব্লিউই ঘোষণা করেছে যে, তাদের ইন্ডেন ওপেনকাস্ট মাইন শিগগিরই সৌর শক্তি উৎপাদন করবে, ছবি-পিইআই ডটকম

রাশিয়ান গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে ইউরোপে আরও সোলার প্যানেল তৈরি করতে হবে বলে তাগিদ দিয়েছে ইইউ। সৌরশক্তির মাধ্যমে শিল্প পুনর্গঠনের জন্য যা যা প্রয়োজনে সবই করবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। ব্রাসেলসে সোলার পাওয়ার সামিট কনফারেন্সে ইউরোপীয় জ্বালানি কমিশনার ও এস্তোনিয়ার রাজনীতিক কাদরি সিমসন বলেন, আমাদের ইউরোপে সৌর উৎপাদনকে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং কমিশন এটির জন্য যা কিছু করা দরকার তা করতে ইচ্ছুক।

২০২১ সাল ছিল নবায়নযোগ্য শক্তি, বিশেষ করে সৌরশক্তি ব্যবহারে ইউরোপের শিল্পকারখানার জন্য উল্লে­খযোগ্য উত্তরণের বছর। ইউরোপের বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে আরও বেশি সৌর প্যানেল সংযুক্ত হয়েছে বছরটিতে। এর আগের বছরের তুলনায় তাদের সৌরশক্তি ব্যবহারের হার বেড়েছিল ৩৪ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, জলবায়ু-সচেতন হওয়ায় ইউরোপের সরকারগুলো আগে থেকেই সৌরশক্তির ব্যবহার শুরু করেছিল- এখন যা রাশিয়ার ‘গ্যাস-অস্ত্রে’র বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এরই মধ্যে বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্র সাহসী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। নেদারল্যান্ডস শীর্ষ সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারকারী হওয়ার জন্য প্রশংসিত হয়েছে। সৌরশক্তি উৎপাদনে চীন ২০১৯ সাল থেকে বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়। এই সময়ে ৩০.১ গিগাওয়াটের বেশি ফটোভোলটাইক (পিভি) ক্ষমতা স্থাপন করেছে দেশটি। বৃহত্তম জনসংখ্যা এবং কার্বন-অস্ত্রের দেশ হিসেবে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতি এই প্রতিশ্রুতি অবশ্যই উৎসাহজনক।

এক্ষেত্রে এর পরের অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান এবং ভিয়েতনাম। ইউরোপের মধ্যে ইতালি, ফ্রান্স এবং স্লোভেনিয়া সৌরপ্যানেল ব্যবহারে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে আছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, ইউরোপের সৌর প্রবৃদ্ধি দিন দিনই উন্নত হচ্ছে। কারণ, ব্লকটি জ্বালানি খাতে নবায়নযোগ্য উৎসের ওপর নির্ভর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

২০২১ সালের জুন-জুলাই মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতটি দেশ তাদের বিদ্যুতের দশমাংশেরও বেশি সৌর প্যানেল থেকে উৎপন্ন করেছে। এর মধ্যে নেদারল্যান্ডস (১৭ শতাংশ), জার্মানি (১৭ শতাংশ), স্পেন (১৬ শতাংশ), গ্রিস (১৩ শতাংশ) এবং ইতালি (১৩ শতাংশ) সৌরশক্তির জোগান দিয়ে নেতৃত্বের পর্যায়ে রয়েছে। হাঙ্গেরি জুন-জুলাই ২০১৮ থেকে তার সৌরশক্তির ব্যবহার চারগুণ করেছে।

নেদারল্যান্ডস এবং স্পেন সেটি দ্বিগুণ করতে সমর্থ হয়েছে। এস্তোনিয়া এবং পোল্যান্ড ২০১৮ সালের জুন-জুলাই থেকে ২০২১- সময়ে যথাক্রমে ১০ শতাংশ এবং ৫ শতাংশের কাছাকাছি সৌরশক্তি সঞ্চয় করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি এবং রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি জার্মানিসহ রুশ গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল অন্য দেশগুলোর শিল্পকারখানা হুমকির মুখে পড়েছে।