ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলা: ক্ষমতাসীনদেরই একাংশ নাখোশ

মদিনার ঘটনায় ইমরান খান ও তার দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন জোটের কয়েকজন সিনিয়র নেতা। মামলার ফলে সরকার অবস্থান হারাচ্ছে এবং ইমরান খানের পক্ষে জনসমর্থন বাড়ছে বলে মনে করছেন তারা।

মামলার ফলে ইমরান খানের জনসমর্থন বাড়বে বলে মনে করছেন পিএমএল-এন ও পিপিপির একাধিক সিনিয়র নেতা

ডন জানিয়েছে, পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন জোটের বৃহত্তম দুই শরিক পিএমএল-এন ও পিপিপির শীর্ষ নেতারা মসজিদে নববীতে সংঘটিত ঘটনায় সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং ইমরান খানসহ পিটিআইর নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় নাখোশ হয়েছেন। দুই দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন জোটে মোটামুটি এমন ভাবনা কাজ করছে যে, সরকার ওই ঘটনায় বাড়াবাড়ি রকমের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। পিটিআই নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি সরকারের জন্য বিরূপ ফলাফল নিয়ে আসছে।

পিএমএল-এন ও পিপিপির প্রবীণ নেতারা মনে করছেন, মসজিদে নববীতে শাহবাজ শরীফ ও সফরসঙ্গীদের ঘিরে ‘চোর’ ‘লোটা’ বলে স্লোগান দেওয়ার পর সৌদি কর্তৃপক্ষের হাতে কয়েকজনের গ্রেপ্তারের ঘটনা পিটিআইকে রক্ষণাত্মক ভূমিকায় ঠেলে দিয়েছিল। কিন্তু এরপর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও মামলা পিটিআইকে ভুক্তভোগী হিসেবে উপস্থাপনের সুযোগ তৈরি করেছে।

শাহবাজ শরীফের মন্ত্রীসভার সদস্য ও পিএমএল-এন কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মসজিদে নববীর ঘটনার পর গোড়াতে আমাদের প্রতি মানুষের সমবেদনা ছিল। এখন সমর্থন অন্যদিকে সরে যাচ্ছে।

ক্ষমতাসীন দলগুলো অতীতে ইমরান খানের বিরুদ্ধে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে এ কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এখন নিজেরাই মামলা দায়ের করায় এবং ঘটনাটিকে ধর্মের অবমাননার সঙ্গে তুলনা করায় নৈতিক অবস্থান দুর্বল হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের এসব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অপরাধীদের ভুক্তভোগী হিসেবে উপস্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছে। এ কারণে এখন সিভিল সোসাইটি ও বিদগ্ধ মহল ব্লাসফেমি মামলার বিরোধিতা করে বিবৃতি দিচ্ছে।

এদিকে সরকারের আরেক মন্ত্রী ও পিএমএল-এন নেতা জাভেদ লতিফ প্রকাশ্যেই পিটিআই নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার বিরোধিতা করে বলেছেন, এতে করে ইমরান খানের ঝামেলা সৃষ্টির সুযোগ আরও বাড়বে।

সোমবার লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জোট না হয়ে কেবল আমাদের দলের সরকার হলে আমি প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি অনুরোধ করতাম। এখন এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অনুরোধ করছি, মসজিদে নববীর স্পর্শকাতর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলোয় পিটিআই নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর নিবন্ধন করবেন না। বরং রাষ্ট্র নিজেই সামনে এসে ইমরান খানের ঝামেলার বিরুদ্ধে মামলা করুক।

পিএমএল-এনের ওয়াকিবহাল একটি সূত্র বলছে, জাভেদ লতিফ একা নন, এমন অনুরোধ সরকারের ভেতরে আরও কয়েকজনের কাছ থেকে এসেছে। এভাবে মামলা দিয়ে আগ্রাসী অবস্থান নিলে ইমরান খান তার সুবিধা ভোগ করবেন। এরচেয়ে ইমরান খান ও তার দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করা জরুরি।

এদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ সোমবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেছেন, কোনো ধরনের প্রতিশোধ নেওয়া সরকারের উচিত হয়। আমাদের দরকার সরাসরি সংঘাত পরিহার করা।

পিপিপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিনেটর ফরহাতুল্লাহ বাবর টুইটারে এক পোস্টে পিটিআই নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাকে ‘অত্যন্ত বিরক্তিকর, পাগলামিসুলভ ও নিন্দাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ধর্মভিত্তিক আইনগুলোকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের বিরোধিতা অতীতে করেছি, এখন করছি এবং ভবিষ্যতেও করব।

পিটিআই নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা না করে বরং ওই ঘটনার পর সৌদি কর্তৃপক্ষের হাতে আটক পাকিস্তানিদের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিতে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান এ প্রবীণ রাজনীতিক। মজার ব্যাপার হলো, ফরহাতুল্লাহ বাবর এ ধরনের অনুরোধ করলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বটি তারই দলের নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির হাতে রয়েছে।

মসজিদে নববীর ঘটনায় পিটিআই নেতাদের বিরুদ্ধে ফয়সালাবাদে আটক ও ইসলামাবাদে মামলা হয়েছে। এছাড়া সৌদি কর্তৃপক্ষ পাকিস্তান সরকারের অনুরোধে সেদেশে প্রবাসী ৫০ জন পাকিস্তানিকে আটক করেছে।

সৌদিতে পিটিআই বিষয়টিকে সরকারকে আক্রমণের হাতিয়ার হিসেবে নিয়ে বলছেন, ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সৌদি আরবে প্রথম সফরে গিয়ে সেখানকার সরকারকে অনুরোধ করে ১ হাজার ৫০০ প্রবাসী পাকিস্তানিকে কারাবাস থেকে মুক্ত করেছেন। অন্যদিকে শাহবাজ শরীফ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গিয়ে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করে ৫০ জন প্রবাসী পাকিস্তানিতে জেলে পুরেছেন।