ভারতের সুপ্রিম কোর্ট: তাবলিগের বিদেশিরা কেন কালো তালিকায়?

২০১৯ সালের একেবারে শেষদিকে চীনে আঘাত হানে করোনাভাইরাস। অচেনা এ ভাইরাসের বিপদ বুঝতে বিশ্ববাসীর লেগে যায় আরো কয়েক মাস সময়। ওই সময় সবকিছু স্বাভাবিকই চলছিল। ভারতেও তাবলিগি কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা। কিন্তু করোনা নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যাওয়ায় হঠাৎ করেই ভারতে থাকা তাবলিগ জামাতের বিদেশিদের কালো তালিকাভুক্ত করে দেশটির সরকার। এ পদক্ষেপ কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশটির শীর্ষ আদালত।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

জানা গেছে, ২০২০ সালের মার্চে যখন করোনা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তাবলিগি কাজে ব্যস্ত ছিলেন প্রচুর বিদেশি। তখন কেউ কেউ তাদের এরকম জমায়েতের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে থাকে। তার জেরে ১০ বছরের জন্য ৩৫টি দেশের ৯৬০ জন বিদেশিকে ভারতে আসা নিষিদ্ধ করে মোদি সরকার। আদালত বলেছেন, সরকারের এ কাজটি কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল তা আগামী সপ্তাহে খতিয়ে দেখা হবে।

তাবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে সরকারের এ ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকে দাবি করেছিলেন, তাবলিগের লোকজনের মাধ্যমেই ভারতে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। পরে তাদেরকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলেও কারো মধ্যেই করোনার কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি।

ভারতে তাবলিগ জামাতের সদস্যরা

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এএম খানউইলকার, এএস ওকা ও সিটি রবিকুমার বলেন, কোনো বিদেশিকে গুপ্তচর হিসেবে সন্দেহ হলে সরকার ভিসা না দেওয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু যদি তাকে ভিসা দেওয়া হয়, তাহলে কি কোনো সুযোগ দেওয়া ছাড়াই তা বাতিল করা যায়? আগাম নোটিশ না দিয়েই তাকে কি ব্ল্যাকলিস্ট করা যায়?

বিচারপতিদের বেঞ্চ আরো জানান, কাউকে আসতে নিষেধ করার পর যদি তিনি যদি আবার আসার জন্য আবেদন করতেন তবে সেক্ষেত্রে কালো তালিকাভুক্ত করা যেত। কিন্তু একতরফাভাবে কালো তালিকাভুক্ত করা কি যুক্তিযুক্ত? তারা যদি কোনো গ্রুপে আসতেন তবে গ্রুপ লিডারকে নোটিশ দেওয়া যেত, এককভাবে আসলে এককভাবেও নোটিশ দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কোনো নিয়মেরই ধার ধারেনি মোদি সরকার। এ নিয়ে সরকারকে আগামী সোমবার লিখিত হলফনামা জমা দিতে বলেছেন আদালত।

জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষণা করা বিদেশিদের মধ্যে ৩৫ জন বিষয়টি নিয়ে আবেদন করেছিলেন। বৈধ ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছিলেন দাবি করে তারা বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগও আনা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সরকার পক্ষের আইনজীবী তুষার মেহেতা দাবি করেন, যা করা হয়েছে, আইন মেনেই করা হয়েছে। দেশের সার্বভৌম অধিকার হিসেবেই যে কাউকে দেশে ঢুকতে দিতে না পারার অধিকার সরকারের আছে। তাবলিগ ছাড়া অন্য বড় কোনো ইস্যুতেও এই প্রশ্ন উঠতে পারত।