হিন্দুত্ববাদীদের দাবির মুখে তাজমহলের রহস্যময় কুঠুরির ছবি প্রকাশ

ভারতের আগ্রায় অবস্থিত তাজমহল এমনিতেই বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। তারপরও দিন দিন এর বিস্ময় যেন বাড়ছেই। কয়েকদিন আগে দাবি করা হলো, তাজমহল আসলে তেজো মহালয়া নামের একটি মন্দির! পরে দাবি করা হলো, এর ভেতরে তালাবন্ধ করে রাখা ২২টি কুঠুরিতে আসলে অনেক মূর্তি রয়েছে। এগুলো খোলার দাবিতে আদালতে পর্যন্ত আবেদন করা হলো। খবর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

তাজমহলের রহস্যময় কুঠুরির ছবি

হিন্দুত্ববাদীদের সেসব আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। তবে বিতর্কে না গিয়ে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সংস্থা আর্কিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া তথা এএসআই গতকাল সোমবার সেই ‘গোপন’ কুঠুরিগুলির ছবি প্রকাশ করে। উল্লেখ্য, প্রয়াত স্ত্রী মমতাজ মহল স্মরণে আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে মুঘল সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত তাজমহল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থানের একটি।

তাজমহল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর এএসআই কর্মকর্তারা জানান, কুঠুরিগুলোর বিশেষ কোনো গোপনীয়তা নেই। এগুলো মূল কাঠামোর অংশমাত্র। শুধু তাজমহল নয়, দিল্লিতে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধিসহ অনেক স্থাপত্যেই এমন অসংখ্য কুঠুরি রয়েছে বলে জানায় কেন্দ্রীয় সরকারের পুরাতত্ত্ব বিষয়ক সংস্থা।

অপরূপ সৌন্দর্যের তাজমহল

প্রকাশিত ছবিগুলোর ব্যাপারে তাজমহল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত এএসআইয়ের ‘আগ্রা সেল’ জানিয়েছে, ২০২১-এর ডিসেম্বর থেকে ২০২২-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যমুনা নদীলাগোয়া ওই ভূগর্ভস্থ ঘরগুলোতে কিছু রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়েছিল। সে সময়ই ছবিগুলো তোলা হয়। প্রকাশিত চারটি ছবি গত ডিসেম্বরে তোলা হয়।

কয়েকদিন আগে এক সাধুকে তাজমহলের ভিতরে প্রবেশে বাধা দেন রক্ষীরা। এতে ক্ষেপে গিয়ে ওই সাধু দাবি করেন তাজমহল আসলে ‘তেজো মহালয়া’। এটি উদ্ধারে তিনি এ মাসের ৫ তারিখে সব সাধুকে সেখানে একত্র হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। পরে সে আন্দোলনের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এরপর এই মুঘল স্থাপত্যকে শিব মন্দির বলে দাবি করে কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। এরই ধারাবাহিকতায় বিজেপির অযোধ্যা জেলার ‘মিডিয়া ইনচার্জ’ রজনীশ সিংহ এএসআই-এর বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে তাজমহলের ‘আসল ইতিহাস’ অনুসন্ধানের দাবিতে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় তিনি তাজমহলের অন্দরে দীর্ঘ দিন ধরে তালাবন্ধ ওই ২২টি ঘর খোলারও দাবি জানান। গত ১২ মে সেই আবেদন খারিজ করে দেন ইলাহাবাদ হাইকোর্ট।

বিষয়টি নিয়ে আগ্রার ইতিহাসবিদ রানা সাফভি বলেছিলেন, ১৯৭৮ সালের বন্যার আগে ভূগর্ভস্থ এই কক্ষগুলো দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। ওই বন্যায় তাজমহলেও পানি ঢুকে পড়েছিল। সে সময় কিছু ভূগর্ভস্থ কক্ষে পলি জমে যায় এবং পরবর্তীতে ফাটল ধরে। ফলে ঝুঁকি এড়াতে সে সময় কর্তৃপক্ষ কক্ষগুলো বন্ধ করে দেয়। তবে সংস্কার কাজের জন্য কক্ষগুলো মাঝেমধ্যে খোলেন কর্তৃপক্ষ।