চীন: বিশ্বে অশান্তির উৎস হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র

চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে প্রকৃত অশান্তির উৎস হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারাই এখন বিশ্বব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রীকরণকে বাধাগ্রস্ত করছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তৃতার প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। খবর সিনহুয়া।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গত শনিবার বলেন, চীন-মার্কিন সম্পর্ক অসাড় কোনো বিষয় নয়। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সহযোগিতার নীতির ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সমাধান করা। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলোতে সফরের চতুর্থ ধাপে ফিজি সফরকালে ওয়াং এসব কথা বলেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সাম্প্রতিক এক বক্তৃতায় চীনকে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুতর দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। তার জবাবে ওয়াং উল্লেখ করেন- বিশ্ব, চীন এবং চীন-মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় ধরনের ভুল রয়েছে।

চীন-মার্কিন সম্পর্ক

ওয়াং বলেন, মূলত যুক্তরাষ্ট্র যা বর্ণনা করেছে, বিশ্ব পরিস্থিতি তেমন নয়। বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে যৌথভাবে মানব জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষা করা, বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে উন্নীত করা এবং বিশ্ব শান্তি ও প্রশান্তি রক্ষা করা। বিশ্বজুড়ে একটি যৌথ সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন-প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ এবং গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ব্যাপক স্বীকৃতি ও সমর্থন লাভ করেছে, যা মার্কিন আধিপত্য ও ব্লক রাজনীতির জন্য বড় একটি ধাক্কা। যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি বিশ্ববাসীকে কেবলই সংঘাতের দিকে নিয়ে যায় এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিভক্ত করে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষে অশান্তির উৎস হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে ওয়াং বলেন, রাষ্ট্রটি বর্তমান বিশ্বব্যবস্থাকে দুর্বল করে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রীকরণকে বাধাগ্রস্ত করে।

ব্লিনকেনের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ১৪০ কোটি চীনা জনগণের দ্বারা আধুনিকীকরণের সাধারণ ধারণা বিশ্বের জন্য হুমকি বা চ্যালেঞ্জ নয় বরং এটি মানবজাতির জন্য একটি মহান অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শক্তিশালী নেতৃত্বে এই অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।

চীনা জনগণের সংহতি, অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এটি অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করে ওয়াং আরো বলেন, আমাদের লক্ষ্য উন্মুক্ত ও ন্যায্য। আর তা হচ্ছে, জনগণের জীবনকে আরও উন্নত করা এবং বিশ্বে আরও বেশি অবদান রাখা, অন্য কাউকে প্রতিস্থাপন বা চ্যালেঞ্জ করা নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে ওয়াং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সতর্ক হওয়া উচিত যে, একরাষ্ট্র কেন্দ্রীক আধিপত্য কোনো সমর্থন পাবে না, গোষ্ঠী সংঘাতেরও কোনো ভবিষ্যত নেই।

বিশ্বের দেশগুলো একে অপরের সাথে ন্যায্য প্রতিযোগিতা করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেও কিছু প্রতিযোগিতা রয়েছে, তবে এটি কোনোভাবেই ধ্বংসাত্মক হওয়া উচিত নয়। আমরা কখনই ব্ল্যাকমেল বা জবরদস্তির কাছে নতি স্বীকার করব না এবং দৃঢ়ভাবেই চীনের সার্বভৌমত্ব, সুরক্ষা ও উন্নয়নের স্বার্থ রক্ষা করব।