বিজেপির কৌশল: উপ-রাষ্ট্রপতি হতে পারেন একজন মুসলিম

ভারতীয় জনতা পার্টি, বিজেপি হিন্দুত্ববাদী দল হিসেবেই পরিচিত। দলের অভ্যন্তরের সেই চেহারাটা যে কোনো নির্বাচনে প্রকট হয়ে ওঠে। নির্বাচন আসলেই হিন্দুত্ববাদকে ব্যবহার করে জয় পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে দলটি। কোথাও এ ফর্মুলা কাজে দিয়েছে, আবার অনেক জায়গায় ব্যর্থ হয়েছে। তাই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ তকমা লাগাতে এবার দেশের শীর্ষ কোনো কোনো একটি পদে একজন মুসলমানকে বসানোর কৌশল হাতে নিয়েছে বিজেপি।

বিজেপি ও মোদি

মূলত রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি পদ দুটি দিয়ে একবারে কয়েকটি পাখি শিকার করতে চাইছে ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলটি। এর জন্য কংগ্রেসের অনুসরণেও আপত্তি নেই তাদের। কংগ্রেসের জোট সরকারের আমলে প্রতিভা পাতিল ছিলেন রাষ্ট্রপতি এবং হামিদ আনসারি ছিলেন উপ-রাষ্ট্রপতি।

এক্ষেত্রে বিজেপি কংগ্রেস থেকে আরেক কাঠি সরেশ হতে চাইছে। তারা চেষ্টা চালাচ্ছে প্রেসিডেন্ট পদে যে নারীকে মনোনীত করা হবে, তিনি যেন দলিত সম্প্রদায়ের হন। তাহলে নারী, মুসলিম, দলিত দিয়ে বিজেপি একসাথে অনেকগুলো বিতর্ক এড়াতে পারবে। একই সাথে এদের ক্ষেত্রে বিরোধিতা করতেও অন্যরা একটু বেশি চিন্তা করবে।

ভারতের কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট

এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শোনা যাচ্ছে তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল তামিলি সৌন্দরাজনের নাম। অন্যদিকে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে দুজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি ও করলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাবের নির্বাচনে পরাজয় তারই প্রমাণ। ফলে নিজেদের স্ট্যাটাস পাল্টাতে চাইছে চাইছে বিজেপি। নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ প্রমাণ করতে এ পদ দুটোকে ব্যবহার করতে চাইছে মোদি সরকার।

শুধু নিজেদের স্ট্যাটাস পাল্টানো নয়, সেই সাথে এসব পদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া নিয়েও মোদির দলের সংশয় রয়েছে। নতুন প্রার্থী মনোনয়নের মাধ্যমে বিরোধী দলগুলোরও হাত-পা বাধার একটি ব্যবস্থা করছে বিজেপি। তাদের হিসেবটা এমন- এই দুই পদে নারী, দলিত ও মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করানো গেলে বিরোধীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা যাবে, আবার ভোটও আদায় করা যাবে।

অবশ্য উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ের জন্য বিজেপিকে তেমন কোনো কষ্ট করতে হবে না। কারণ এই নির্বাচনের ভোট দেন শুধু এমপিরাই। আর বিজেপির এমপিদের সংখ্যা বেশি। সুতরাং জয় আসবে অনায়াসে। সমস্যা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণ ভারতের প্রার্থী দিয়ে ওই অঞ্চলের বিরোধী ভোটগুলোও বিজেপির পক্ষে আনা যাবে বলে মনে করছে বিজেপি।

আবার নারী হিসেবেও কিছু বিরোধী ভোট বিজেপির অনুকূলে চলে আসবে। কোনোভাবে এই দুই পদে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করা গেলে নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ সুশীল চেহারা তুলে আনা যাবে। এছাড়া মুসলিমবিরোধী বলে যে তকমা বিজেপির গায়ে লেগেছে, তাও ধুয়ে মুছে সাফ করে নেওয়া যাবে।