রাশিয়ার সম্পদ আটকে দুশ্চিন্তায় যুক্তরাষ্ট্র!

ইউক্রেনে হামলার জেরে রাশিয়ার সম্পদ আটকে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সেগুলো দিয়ে ইউক্রেনের পুনর্গঠন কাজ করা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে মার্কিন প্রশাসন। তবে এভাবে ভিন রাষ্ট্রের সম্পদ আটকে দেওয়ায় আমেরিকার বিনিয়োগ পরিবেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। নিউইয়র্ক টাইমস তাদের প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরেছে।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন

হোয়াইট হাউসের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তদের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, এভাবে রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করার ঘটনা বেআইনি হতে পারে। তার চেয়ে বড় সমস্যা হলো, এভাবে সম্পদ আটকের ঘটনায় যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ডলারকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচনা করে, তারা নিরুৎসাহিত হতে পারে।

ইউক্রেনে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংক ও বিনিয়োগে থাকা রাশিয়ার সম্পদ আটকের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া জানিয়েছে, এর পরিমাণ তিন হাজার কোটি ডলারের মতো হতে পারে। দুই সপ্তাহ আগে জি-সেভেনের বৈঠকে জব্দ করা রুশ সম্পদ দিয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের জব্দ করা রুশ মালিকানাধীন একটি ইয়ট

আলোচনায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ওই সম্পদ কাজে লাগানোর প্রস্তাব উঠে আসে। প্রস্তাবে সমর্থন জানায় কানাডা, জার্মানি ও পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এ ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নেয়। মার্কিন অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন বলেছেন, রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ব্যবহার করা হবে পুরোপুরি বেআইনি।

মার্কিন প্রশাসন ধারণা করছে, যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে রাখা ও বিনিয়োগ করা সম্পদগুলোর যদি এই পরিণতি হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের জমানো বা বিনিয়োগ করা অর্থ সরিয়ে নিতে পারে। এমনটি হলে ধীরে ধীরে চাপে পড়ে যেতে পারে মার্কিন অর্থনীতি। এসব কারণে রাশিয়ার সম্পদ নিয়ে এখনো পরিষ্কার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি মার্কিন প্রশাসন।

রাশিয়া বলছে, তার সম্পদ জব্দ করে সেগুলো যদি ইউক্রেনে ব্যবহার করা হয়, তাহলে অবৈধ এ কাজটি হবে পুরোপুরি নৈরাজ্যকর একটি ব্যাপার, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় রকমের প্রভাব ফেলতে পারে।

এর আগে গত বছর আফগানিস্তানের সম্পদ আটকে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মোটামুটি ৭০০ কোটি ডলারের সে তহবিল দিয়ে নাইন ইলেভেন ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও আফগানিস্তানের দরিদ্র জনগণকে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সেই সিদ্ধান্তও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। আফগানিস্তানের বর্তমান তালেবান সরকার তাদের হাতে সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানায়। চীন-রাশিয়াসহ বেশ কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের এমন কার্যকলাপকে নিন্দা জানিয়ে একে ডাকাতি বলেও উল্লেখ করে।

বছর না পেরুতেই একই ধরনের ঘটনা ঘটছে রাশিয়ার ক্ষেত্রে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ডলারে বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যতে যে কোনো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে বাধ্য হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে হোয়াইট হাউস।