‘গরমে মাথা গরম হয়ে যায়’ - তাই বারবার বন্দুক হামলা!

যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান বন্দুক হামলায় হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ হিসেবে অদ্ভুত এক ব্যাখ্যা দিয়েছে দেশটির পুলিশ বিভাগ। তাদের বক্তব্য, গরমে মাথা গরম হয়ে যায়। এ সময় সক্রিয় হয়ে ওঠে খুনিরা। যদিও আবহাওয়া ও অপরাধের মধ্যে যোগসূত্র থাকার বিষয়টি একেবারে নতুন নয়। এ রকম যোগসূত্রের কথা আগেও বলেছেন অপরাধবিজ্ঞানীরা। শনিবার প্রকাশিত এএফপির প্রতিবেদনে মার্কিন পুলিশ দপ্তর সেই পুরোনো তত্ত্বটিই আবার নতুন করে স্মরণ করে দিলো।

অদ্ভুত এক ব্যাখ্যা দিয়েছে দেশটির পুলিশ বিভাগ

হাভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের স্বাস্থ্যনীতিবিষয়ক অধ্যাপক ডেভিড হেমেনওয়ে বলেন, চারপাশে কেউ না থাকলে কাউকে গুলি করাটা কঠিন। এ কারণে খারাপ আবহাওয়ায় বন্দুক সহিংসতার ঘটনা কম হয়।

২০২০ সালে ডেভিড হেমেনওয়ে ও তার স্নাতক পর্যায়ের ছাত্র পল রিপিং শিকাগো শহরের অপরাধমূলক ঘটনা নিয়ে গবেষণা করেন। ২০১২ থেকে ২০১৬ সালে শিকাগো শহরের অপরাধপ্রবণ ঘটনাগুলো তাদের গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শিকাগো ট্রিবিউনে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে দৈনিক বন্দুক সহিংসতার ঘটনার সঙ্গে আবহাওয়ার তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বাতাসের গতি, তাপমাত্রার যোগসূত্র নিয়ে গবেষণা করা হয়।

ওই গবেষণায় দেখা যায়, ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রায় ৩৪ শতাংশ বেশি বন্দুক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ছুটির দিন ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ৪২ শতাংশ বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গড়ে ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেশি থাকলে বন্দুক সহিংসতা ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি ঘটে। তবে শুধু গ্রীষ্মকালে গরম পড়লেই যে এমনটা ঘটে, তা নয়।

শীতকালে যেসব দিন তুলনামূলক বেশি উষ্ণ থাকে, সেসব দিনেও এরকম অপরাধের ঘটনা বেশি ঘটেছে। ফিলাডেলফিয়ার অপরাধমূলক ঘটনা নিয়ে একই রকম গবেষণা করেছেন ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক লিয়া সিচিনাসি। ২০১৭ সালে জার্নাল অব আরবান হেলথে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে সিচিনাসি ও সহলেখক ঘাসান হামরা বলেন, বেশি গরম ছিল এমন মাসগুলোতে সহিংস ঘটনা বেশি ঘটেছে।

মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস ছিল বেশি গরমের দিন। আর এ সময়টাতেই এসব সহিংস ঘটনা বেশি ঘটেছে। অক্টোবর থেকে এপ্রিলে শীতের সময় এ ধরনের সহিংস ঘটনা কম ঘটেছে। এই দুই গবেষক বলেন, ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার তুলনায় ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১৬ শতাংশ অপরাধ বেশি হয়েছে। তাহলে মরু অঞ্চলে কেনো বন্দুক হামলা হয় না? জবাব হল, অস্ত্র বাণিজ্য একটি বড় কারণ।

গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ৯ মিলিমিটার পিস্তল পাওয়া যায়, যা নির্ভুল নিশানাসহ ব্যবহারে সহজ এবং স্বয়ংক্রিয় ট্রিগার সমৃদ্ধ। দাম ২০০ ডলারেরও কম।

মার্কিন আগ্নেয়াস্ত্র নির্মাতারা ২০০০ সাল থেকে গত দুই দশকে বাণিজ্যিক বাজারের জন্য প্রায় ১৪ কোটি বন্দুক তৈরি করেছে। দেশটিতে এ সময়ে আমদানি হয়েছে আরও সাত কোটি ১০ লাখ বন্দুক। এরমধ্যে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতার অ্যাসল্ট রাইফেল, যেটি ৫০০ ডলারে পাওয়া যায়।