আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে পশ্চিমারা, আশঙ্কা কিয়েভের

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ১০০ দিন ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দুই পক্ষের কেউই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসছে না। এমতাবস্থায় কিয়েভ আশঙ্কা করছে, যুদ্ধের ক্লান্তির ফলে পশ্চিমা বিশ্ব এই সংঘাত নিয়ে তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট।

যুদ্ধের দীর্ঘসূত্রিতা চিন্তায় ফেলেছে ইউক্রেনের নেতৃবৃন্দকে

চতুর্থ মাসে গড়ানো এ লড়াইয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইউক্রেনকে বিলিয়ন ডলার মূল্যে অস্ত্র দিয়েছে। রাশিয়া ও তার সহযোগীদের ওপর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইউক্রেনের ৭০-৮০ লাখ শরণার্থী আশ্রয় দিয়েছে।

কিন্তু তারা এমন দীর্ঘমেয়াদি লড়াই আশা করেনি। ফলে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে আপসের মনোভাব দেখা দিচ্ছে, যা মেনে নিতে প্রস্তুত নয় জেলেনস্কির সরকার। এরই মধ্যে ইউরোপের কয়েকটি রাষ্ট্রের পক্ষ হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, আপস মেনে নেওয়া উচিত কিয়েভের।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন

কিন্তু জেলেনস্কি জানিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধের সমাপ্তি বা শান্তির ক্ষেত্রে কিয়েভ নিজের নীতি মেনে সিদ্ধান্ত নেবে। এ প্রসঙ্গে তার মন্তব্য, ক্লান্তি বাড়ছে, ফলে লোকেরা নিজেদের জন্য এক ধরনের ফল কামনা করে আর আমরা নিজেদের জন্য অন্য কিছু চাই।

জানা গেছে, ইউক্রেন ইতোমধ্যে একটি ইতালীয় শান্তি প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে। আবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন যখন বলেছেন, রাশিয়াকে অপমান করা উচিত নয়, নইলে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত সমাধানের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা ম্যাক্রনের এ প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেন।

রাশিয়ার সঙ্গে আপস করার পরামর্শ দিয়ে সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার একটি মন্তব্যে জানিয়েছেন, ইউক্রেনের আঞ্চলিক ছাড় বিবেচনা করা উচিত। যদিও বিষয়টিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে হিটলারের কাজের সাথে তুলনা করা হচ্ছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি শহর পুরোপুরি মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে। পালিয়ে গেছে লাখ লাখ ইউক্রেনীয়। পাল্টা প্রতিরোধ হিসেবে ইউক্রেন পশ্চিমা বিশ্বের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত রাশিয়ার ৩০ হাজারের বেশি সেনাকে হত্যা করেছে বলে দাবি করে।

লড়াইয়ের মাধ্যমে এ যাত্রায় রাশিয়ার দখল করে নেওয়া জায়গা থেকে তাদেরকে সরিয়ে দিতে চায় ইউক্রেন। সেই সাথে আট বছর আগে রাশিয়ার সাথে যুক্ত হওয়া ক্রিমিয়াও পুনরুদ্ধার করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা বলছে। যুদ্ধের বর্তমান অবস্থান থেকে বিষয়গুলো বেশ কঠিন বলেই মনে করা হচ্ছে।

এদিকে পেন্টা সেন্টার থিঙ্ক ট্যাঙ্কের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভলোদিমির ফেসেনকো বলেছেন, যুদ্ধের প্রতি মাসে ইউক্রেনের ৫০০ কোটি ডলার খরচ হচ্ছে এবং এটি কিয়েভকে ক্রমশই পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল করে তুলছে।