ভয়েস অফ আমেরিকা ও ডিডাব্লিউর অ্যাক্সেস বন্ধ করে দিলো তুরস্ক

তুরস্কের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের ভয়েস অফ আমেরিকা (ভিওএ) এবং জার্মানির ডয়চে ভেলের (ডিডাব্লিউ) তুর্কি ভাষার সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির অনুরোধ অনুযায়ী লাইসেন্সের জন্য আবেদন না করায় গত বৃহস্পতিবার এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

ভয়েস অফ আমেরিকা ও ডয়চে ভেলে

তুরস্কের রেডিও এবং টেলিভিশন সুপ্রিম কাউন্সিল আরটিইউকে গত ফেব্রুয়ারিতে ভয়েস অফ আমেরিকা ও ডয়চে ভেলেসহ তিনটি আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যমকে স্বল্পমেয়াদের এক নোটিশ দেয়। বলা হয়, অবিলম্বে তাদেরকে লাইসেন্স নিতে হবে, অন্যথায় সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হবে।

আরটিইউকের একজন বোর্ড সদস্য ইলহান টাসি বৃহস্পতিবারে একটি টুইটে লেখেন, নিয়ম মেনে লাইসেন্সের জন্য আবেদন না করায় আরটিইউকের অনুরোধে আঙ্কারা ক্রিমিনাল কোর্ট অফ পিস ডিডাব্লিউ তুর্কি এবং ভিওএকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

তুরস্কের রেডিও এবং টেলিভিশন সুপ্রিম কাউন্সিল আরটিইউকে

আরটিইউকের সহকারী প্রধান ইবরাহিম উসলু বলেন, অন্যকিছুর সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই বরং কারিগরী পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিডাব্লিউ ও ভিওএর ওয়েবসাইটগুলোতে অ্যাক্সেস সীমিত করে দেওয়া হয়েছে।

ফলে গতকাল শুক্রবার তুরস্কে এ দুটি গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটই পাওয়া যায়নি। ডয়চে ভেলে জার্মান করদাতাদের অর্থায়নে পরিচালিত একটি সংবাদমাধ্যম। অন্যদিকে ভিওএ মার্কিন সরকারের অর্থায়নে ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

ভয়েস অব আমেরিকার মুখপাত্র ব্রিজেট সেরচাক বলেন, ভিওএ বিশ্বাস করে যে, সংবাদ সংস্থাদের চুপ করানোর সরকারি যে কোনো প্রচেষ্টা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার লঙ্ঘন। এ স্বাধীনতা যে কোনো গণতান্ত্রিক সমাজের একটি কেন্দ্রীয় মূল্যবোধ। তুরস্কের সরকার যদি আমাদের ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করে, সেক্ষেত্রে তুর্কি ভাষাভাষী দর্শক-শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাতে ভিন্ন পথ অববলম্বন করবে ভিএও।

অন্যদিকে ডয়চে ভেলে কর্তৃপক্ষ জানায়, তুরস্কের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে তুরস্কের মিডিয়া ওয়াচডগ প্রতিষ্ঠান আরটিইউকে ডিডাব্লিউ ও অন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে বলে। অন্যথায় দেশটির ২০১৯ সালের মিডিয়া আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানায়।

তখন এক বিবৃতিতে ডিডাব্লিউ জানিয়েছিল, তারা এটি মানতে পারছে না। কারণ, এতে তুর্কি সরকার তাদের কনটেন্ট সেন্সর করার অধিকার পাবে। ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পেটার লিমবুর্গ বলেন, আমরা জানিয়ে দিয়েছিলাম, কেন আমরা এই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারি না। তুরস্কে লাইসেন্সকৃত মিডিয়াগুলোকে আরটিইউকের কাছে অনুপযুক্ত মনে হয়- এমন অনলাইন কনটেন্ট মুছে দিতে হয়, যা একটি স্বাধীন সম্প্রচার মাধ্যমের কাছে এটি অগ্রহণযোগ্য।

আরটিইউকে শুক্রবার তার ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতিতে সব ধরনের সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, কাউকে মতপ্রকাশ বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়ে অনিশ্চয়তায় থাকতে হবে না, অকারণে উদ্বিগ্ন হতে হবে না বা আমাদের সুপ্রিম বোর্ডকে দোষী সাব্যস্ত করতে হবে না, যা আইনি ভিত্তিতে তার দায়িত্ব পালন করছে।

আরটিইউকে বিবৃতিতে আরো জানায়, যদি মিডিয়া সংস্থাগুলো প্রবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কাজ করে তবে অ্যাক্সেসের নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন পড়তো না। প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতে এ দুটি সংবাদমাধ্যমকে নিষিদ্ধ করে রাশিয়া। যুদ্ধ নিয়ে ভুল সংবাদ প্রচারের অভিযোগ এনে সংস্থা দুটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয় মস্কো।