ক্রিমিয়া ও জাপরোঝঝিয়ার মধ্যে বাস চলাচল শুরু

ইউক্রেনে দখলকৃত অঞ্চলের যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা ঢেলে সাজাচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পূর্ব উপকূলের শহরগুলোকে বাস ও ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হচ্ছে। গতকাল ক্রিমিয়া থেকে জাপরোঝঝিয়া পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। একইদিন ক্রিমিয়া-খেরসন-জাপরোঝঝিয়া রুটে ট্রেন চলাচল শুরুর কথা থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে তা কয়েকদিনের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইউনাইটেড রাশিয়ার স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে ক্রেমলিনের ডনবাস-বিষয়ক পয়েন্টসম্যান সের্গেই কিরিয়েঙ্কো

ক্রিমিয়ার প্রশাসনিক প্রধান সের্গেই আকসিয়ানভ বলেছেন, ক্রিমিয়া থেকে জাপরোঝঝিয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হবে। ক্রিমিয়া-জাপরোঝঝিয়া রেল রুটের ঝানকই-মেলিটোপোল ও ঝানকই-খেরসন অংশে রেলপথের নিরাপত্তা জোরদার কার্যক্রম শেষ হলেই ট্রেন চালু হবে।

তিনি বলেন, নতুন ট্রেন চলাচলের সময়সূচি সংক্রান্ত তথ্য অফিসিয়াল চ্যানেলে প্রকাশ করা হবে। যারা এরইমধ্যে জুলাইয়ের ১-৩ তারিখের টিকেট কেটেছেন, তারা ট্রেন চালুর পর ওই টিকেটে ভ্রমণ করতে পারবেন। অন্যথায় টিকেট জমা দিয়ে অর্থ ফেরত নিতে পারবেন।

এদিকে ইউক্রেনের পূর্ব উপকূলের ক্রিমিয়া-খেরসন-জাপরোঝঝিয়া রুটে বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। আট বছর আগে রাশিয়া ক্রিমিয়ার দখল নেওয়ার পর এ সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়।

জানা গেছে, প্রতিদিন কয়েকটি বাস ক্রিমিয়ার সিমফেরোপুল থেকে খেরসন, মেলিটোপোল, জাপরোঝঝিয়া হয়ে বারদিয়ানস্ক পর্যন্ত যাতায়াত করবে। একইভাবে বারদিয়ানস্ক থেকে ক্রিমিয়ার পথে বাস চলবে।

অবকাঠামো পুনর্গঠনে জোরারোপ

রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী মারাত খুশনুলিন বলেছেন, আসন্ন হেমন্ত ও শীত মৌসুমে সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত ডনবাস অঞ্চলের পুনর্গঠন কার্যক্রম জোরদার করবে। রাশিয়ার ৬ হাজার ঠিকাদার, প্রকৌশলী ও নির্মাণকর্মী বর্তমানে ওই অঞ্চলে কাজ করছেন। কিছুদিনের মধ্যে কার্যক্রম আরও বাড়ানো হবে।

রুশ সরকার ডনবাসের দখলকৃত এলাকা পুনর্গঠনের সুবিধার্থে সেখানকার শহরগুলোর পৃষ্ঠপোশকতার দায়িত্ব রাশিয়ার বিভিন্ন স্থানীয় সরকারকে দিয়েছে। এর আওতায় মস্কো আঞ্চলিক সরকার দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক শহরের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছে। একইভাবে সেইন্ট পিটার্সবার্গ নিয়েছে ওডেসা ও খেরসনের দায়িত্ব।

মারাত খুশনুলিন গতকাল ডনবাসের বিভিন্ন শহরের পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব গ্রহণকারী রুশ অঞ্চলগুলোর গভর্নরদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি দখলকৃত অঞ্চলে রাশিয়ার গৃহীত উন্নয়ন ও পুনর্গঠন কার্যক্রমের ওপর আলোকপাত করেন।

তিনি বলেন, বন্দরনগরী মারিওপোলে আগের তুলনায় বহুগুণ বেশি অবকাঠামো ও আবাসন সুবিধা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। মারিওপোল বন্দর এরইমধ্যে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। বন্দর এলাকায় বিদ্যুৎ অবকাঠামো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বারদিয়ানস্ক বন্দরও কার্যক্রম পরিচালনার উপযোগী হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার স্থানীয় সরকারগুলো ডনবাস অঞ্চলের অবকাঠামো ও পরিষেবা ব্যবস্থা পুনর্বাসনে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে। স্থানীয় অধিবাসীরা এসব কার্যক্রমের সুবিধা পাচ্ছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রুশ সশস্ত্র বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা মারিওপোলের আবাসন সমস্যা সমাধানে কয়েকটি মাইক্রোডিস্ট্রিক্ট নির্মাণে কাজ করছে। এর মধ্যে এক হাজার অ্যাপার্টমেন্ট-সম্বলিত একটি মাইক্রোডিস্ট্রিক্ট শিগগিরই হস্তান্তর করা হবে। ১২টি ৫তলা ভবন নিয়ে ওই মাইক্রোডিস্ট্রিক্টের নির্মাণ কাজ শেষ হবার পথে রয়েছে। এছাড়া লুহানস্কে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বহুমুখী হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

খারকিভে পুতিনের খাস লোক

ডনবাস অঞ্চল সংক্রান্ত কার্যক্রমে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পয়েন্টসম্যান হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ক্রেমলিনের সাবেক ডেপুটি চিফ অব স্টাফ সের্গেই কিরিয়েঙ্কো গতকাল খারকিভ অঞ্চল সফর করেছেন। তিনি সেখানে কুপয়ানস্ক ও ইজিউম এলাকায় সিভিল-মিলিটারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

জানা গেছে, সের্গেই কিরিয়েঙ্কো দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে সেপ্টেম্বর থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণের অগ্রগতি, পেনশন ও অন্যান্য ভাতা বিতরণ, চিকিৎসা অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এছাড়া তিনি খেরসন অঞ্চলে রাশিয়ার ক্ষমতাসীন দল ইউনাইটেড রাশিয়ার স্বেচ্ছাসেবা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।