নানা তথ্য-উপাত্ত থেকে ধারণা করা হয়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়। যা পরবর্তীতে বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেয়। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একটি প্রতিনিধি দল সেই উহান সফর করেছে। অভিযোগ রয়েছে, চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের পুরোপুরি সহযোগিতা করেনি। তবে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা যে তথ্য পেয়েছেন, তা থেকেই তারা ধারণা করছেন যে, উহানে সংক্রমণ আগে শুরু হয়েছিল এবং যে সংক্রমণের কথা বলা হয়েছে, বাস্তবে সে সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান কার্যালয়
ধারণা করা হয়, চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের একটি সি ফুড সেন্টারে প্রথম করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শনাক্ত হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। এর পর তা আস্তে আস্তে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
২০২০ সালের শুরুতে মার্কেটটি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সেখানে জনসাধারণের প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এখনো দেশটির নিরাপত্তারক্ষীরা মার্কেটটিকে সারাক্ষণ ঘিরে রাখে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্ত দল উহান সফরে গিয়ে এই মার্কেটটি ঘুরে দেখেছে।
তদন্ত দলের প্রধান পিটার বেন এমব্যারেক বলছেন, উহানে করোনার সংক্রমণ ২০১৯ সালে ধারণার চেয়েও অনেক বেশি ছিল। এ বিষয়ে তারা বেশ কিছু লক্ষণ খুঁজে পেয়েছেন বলেও দাবি তার। তার মতে, এর একটি লক্ষণ হলো- ওই বছরের ডিসেম্বর মাসেই উহানে এক ডজনের বেশি করোনার স্ট্রেইন (ধরন) সংক্রমণ শুরু করে।
অস্ট্রেলিয়ার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডোমিনিক ডোয়ার বলছেন, চীন মূল তথ্যের শুধু সারাংশ দিয়েছে
এই বিজ্ঞানী বলেন, চীনা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুসারে দেশটিতে যিনি প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তার সঙ্গে তাদের কথা বলার সুযোগ হয়েছে। ৪০ এর বেশি বয়সী এই ব্যক্তি ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে আক্রান্ত হওয়ার আগে কাছাকাছি সময়ে তিনি বাইরে কোথাও কোনো ভ্রমণ করেননি।
উহান সফরে প্রতিনিধি দলটি যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে, তার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা বলছেন, উহানে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার বিষয়টি মধ্য ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানা গেছে। তবে প্রকৃতপক্ষে অনেক আগেই চীনে ছড়িয়ে থাকতে পারে এ ভাইরাসের সংক্রমণ।
চীনের পক্ষ থেকে তদন্তকারীদের ‘পূর্ণ সহযোগিতার’ দাবি করা হয়েছে। কিন্তু শুরুতে যে ১৭৪ জন শনাক্ত হয়েছিলেন তাদের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত বিস্তারিত দিতে রাজি হয়নি বেইজিং। অথচ রোগটির গতি-প্রকৃতি বুঝতে ওই ডেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি দলটি।
উহান সফরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি দল
এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডোমিনিক ডোয়ার- যিনি ওই দলে ছিলেন- বলছেন, যে ১৭৪ জন প্রথম শনাক্ত হয়েছিলেন, তারা মূলত লাইন লিস্টিং বা আমরা তাদের তথ্যকে ‘র’ ডেটা বলছি। তথ্যের শুধু সারাংশ দিয়েছে চীন। বিস্তারিত ডেটা দিতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
কোনো প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে তদন্ত করতে গেলে ‘র’ ডেটা গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন চীন থেকে ফিরে নিজ দেশে কোয়ারেন্টাইনে থাকা এই বিশেষজ্ঞ।
‘তারা কেন দেয়নি, আমি জানি না। থাকতে পারে রাজনৈতিক কারণ, কিংবা অন্য কোনো কঠিন বিষয়। সেটা আমি জানি না, সবই অনুমান,’ বলেন অস্ট্রেলীয় বিশেষজ্ঞ ডোমিনিক ডোয়ার।
সূত্র: রয়টার্স, সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমস।