গাজায় খাদ্য সহায়তা এখন মৃত্যুফাঁদ: অবিলম্বে বন্ধের দাবি

গাজায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিকে ‘মানবিক সহায়তার আড়ালে হত্যাকাণ্ড’ বলে আখ্যা দিয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)। শুক্রবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, এই ব্যবস্থাটি বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের খাদ্যের জন্য জীবন বাজি রাখতে বাধ্য করছে এবং এটি একটি পরিকল্পিত অমানবিক কার্যক্রম। অবিলম্বে এই কর্মসূচি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

ছবি - সংগৃহীত

বিবৃতিতে এমএসএফ উল্লেখ করেছে, ‘খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ৪,০০০ মানুষ আহত হয়েছেন। মানবিক সহায়তার নামে এই হত্যাকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’

সংস্থাটি জানায়, ‘গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ নামের একটি তথাকথিত প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে পরিচালিত এই কর্মসূচি সাধারণ খাদ্য সহায়তাকে এক ভয়াবহ মৃত্যুফাঁদে পরিণত করেছে। এমএসএফের মতে, ‘১০০ দিনের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি অবরোধে ক্ষুধায় কাতর হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে চারটি বিতরণ কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের সামান্য খাবারের জন্য নিজেদের মধ্যে লড়াই করতে হচ্ছে।’

গাজায় এমএসএফের জরুরি সমন্বয়ক আইতর জাবালগোগিয়াজকোয়া এই ব্যবস্থাকে একটি পরিকল্পিত ফাঁদ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিতরণের জন্য নির্ধারিত চারটি কেন্দ্রই ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় অবস্থিত, যেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো ফুটবল মাঠের মতো বিশাল এবং পর্যবেক্ষণ চৌকি, মাটির স্তূপ ও কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেড়া দেওয়া প্রবেশপথে ঢোকা বা বের হওয়ার জন্য মাত্র একটি পথ রয়েছে। কর্মীরা খাবারের বাক্সগুলো নামিয়ে বেড়া খুলে দেয়, আর সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ একযোগে ভেতরে ঢুকে খাবারের শেষ কণাটির জন্যও লড়াইয়ে নামে।’

পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মানুষ যদি আগে পৌঁছায় এবং পরিদর্শন চৌকির কাছে যায়, তাদের গুলি করা হয়। যদি সময়মতো পৌঁছানোর পরেও ভিড়ের চাপে বেড়া বা কাঁটাতার টপকে যায়, তাহলেও তাদের গুলি করা হয়। আবার, যারা দেরিতে পৌঁছায়, তাদেরও গুলি করা হয়, কারণ ওই এলাকাটি তখন ‘অপসারণ অঞ্চল’ হিসেবে বিবেচিত হয়।’

এমএসএফ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এবং তাদের মিত্রদের প্রতি গাজায় খাদ্য, জ্বালানি, চিকিৎসা ও মানবিক সরবরাহের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে যেভাবে জাতিসংঘের অধীনে মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা চালু ছিল, তা পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।