অ্যামনেস্টি: উইঘুর মুসলিমদের ‘নিশ্চিহ্ন’ করতে চায় চীন
- Details
- by মাহফুজ সাদি
চীনের স্বায়ত্তশাসিত জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের শেষ করে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটির কমিউনিস্ট সরকার। তাদের হত্যা-নির্যাতনের পাশাপাশি পুরুষদের দাস বানানো এবং নারীদের ‘পদ্ধতিগত গণধর্ষণ’ এবং ‘বাধ্যতামূলক বন্ধ্যা’ করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসি। উইঘুর ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ ও বিস্তারিত বিবরণের ভিত্তিতে তৈরি করা হয় এটি।
এর মাস তিনেক পরে এসে উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে ১৬০ পৃষ্ঠার নতুন একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ‘আমরা যেন যুদ্ধে শত্রুপক্ষ’ শিরোনামে ১০ জুন এটি প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত গবেষণা করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে ১২৮ জনের সাক্ষাৎকার রয়েছে, যাদের ৫৫ জন ‘বন্দিশিবিরে’ ছিলেন এবং ৬৮ জন ‘নিখোঁজ’ পরিবারের সদস্য, জানিয়েছে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে।
এসব ব্যক্তির সাক্ষাৎকারে উইঘুর মুসলিমদের ‘নিশ্চিহ্ন বা শেষ করে দেয়ার’ চীনা নীতির বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। এতে মসজিদ ভেঙে ফেলা, মসজিদে ও মুসলিম বাড়িতে চীনা প্রেসিডেন্টের ছবি টাঙানো, ধর্মীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বাধা প্রদানের বিবরণ রয়েছে।
এ ছাড়া মুসলিম নেতা ও ইমামদের মাঝরাতে তুলে নিয়ে কথিত ‘পুনঃশিক্ষণ শিবিরে’ আটক রাখা, জোর করে অপরাধের স্বীকার আদায়, সন্ত্রাসবাদী ও সন্দেহভাজন হিসেবে দেখানো এবং পুরো সম্প্রদায়ের ওপর নজরদারি করার বর্ণনা রয়েছে।
শিবিরে আটক রাখা ব্যক্তিরা অ্যামনেস্টিকে বলেন, কারাগারের চেয়েও খারাপ অবস্থা শিবিরগুলোর। এর মধ্যে ইসলামের ‘খারাপ’ দিকগুলো নিয়ে সংশোধন-ক্লাস নেয়া হয়, তার আগে সারাদিন বসিয়ে রাখা হয়। নারী ও পুরুষকে নির্যাতনের বিষয়টি তো রয়েছেই।
এমন তথ্য-প্রমাণ ও বিবরণ প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি সুপারিশ করেছে, অপরাধের অকাট্য প্রমাণ না থাকা সব উইঘুর মুসলিমকে শিবির থেকে মুক্তি দিতে হবে। শিবির বন্ধ করা এবং উইঘুরদের অত্যাচার ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের আন্তর্জাতিক দলকে জিনজিয়াংয়ে প্রবেশ করতে দিতে হবে। তারা সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অপরাধের বিষয়টি তদন্ত করবে।
এ বিষয়ে সংস্থাটির সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, এই প্রতিবেদনে চীনের মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। দেশটিকে এ থেকে বিরত রাখতে সব দেশকে সাহসী ভূমিকা রাখতে হবে।
এর আগে আলজাজিরার কাছে বন্দিশিবিরে মুসলিমদের ভয়াবহ পরিস্থিতির লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেলেন ডাক্তার ও শিক্ষাবিদ সাইরাগুল সাউতবে। ওই ক্যাম্পে দুই বছর কাটানো এই নারী দুই সন্তানের জননী।
সাইরাগুলের সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে শিবিরে নারী বন্দিদের মারধর, যৌন নির্যাতন, জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ এবং ধর্মান্তরসহ নির্যাতনের ভয়াবহ, অমানবিক ও সহিংস চিত্র। দীর্ঘ প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইরাগুলের মতো অন্য বন্দিদের সাক্ষ্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, ওই বন্দিশিবিরগুলোতে মুসলিমদের ওপর কতটা কঠোর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে চীন। ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে কীভাবে অবমাননা করা হচ্ছে, পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে, চীনের উইঘুর নীতিকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা। তবে বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বেইজিং দাবি করছে, সন্ত্রাসবিরোধী চেতনা জাগ্রত করতেই এসব শুদ্ধকরণ শিবির তৈরি করা হয়েছে। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কোনো ঘটনা ঘটছে না, ধর্মীয় বিশ্বাসেও আঘাত দেয়া হচ্ছে না।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.
360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.
Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.