রাশিয়া থেকে গ্যাস ক্রয়কারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে অর্ধেকই রুশ মুদ্রায় গ্যাসের মূল্য পরিশোধের শর্ত মেনে নিয়েছে। সবশেষ, জার্মানি ও ইতালি সরকার নিজ নিজ দেশের বিতরণ কোম্পানিগুলোকে রাশিয়া থেকে গ্যাস কেনা অব্যাহত রাখতে রুবলে ব্যাংক হিসাব খুলতে বলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ই্ইউ) সঙ্গে আলোচনার পর বার্লিন ও রোমের কর্মকর্তারা এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছেন।
মে মাসের মধ্যে রুবল অ্যাকাউন্টে বকেয়া পরিশোধ না করলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে রাশিয়া
রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার উপর ইইউর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন না করে কিভাবে গ্যাজপ্রম ব্যাংকে রুবল অ্যাকাউন্ট খোলা যায়, সে বিষয়ে জার্মানি ও ইতালির সরকার স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার ভাষায় ‘রাশিয়ার প্রতি অবন্ধুসুলভ’ দেশগুলোর জন্য রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধের শর্ত জুড়ে দিয়ে গত মাসে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলোকে তিনি অবন্ধুসুলভ বলে অভিহিত করেন। টেলিভিশনে এক বক্তৃতায় তিনি এসব দেশের ক্রেতাদের গ্যাজপ্রম ব্যাংকে রুবল হিসাব খুলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধের পরামর্শ দেন।
বিদেশি ক্রেতারা রুশ গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধ করবে নাকি রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞায় অটল থাকবে- এই বিতর্ককে ঘিরে ইউরোপীয় সরকারগুলোর সামর্থ্য ও দৃঢ়তার এক ধরনের পরীক্ষা এরইমধ্যে হয়ে গেছে। পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া ও ফিনল্যান্ড শর্ত না মানায় এ তিনটি দেশে গ্যাস বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক বলেছেন, ৫৪টি কোম্পানি গ্যাজপ্রম থেকে গ্যাস কিনে থাকে। এর মধ্যে অর্ধেক কোম্পানি রুবলে মূল্য পরিশোধের জন্য গ্যাজপ্রম ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছে।
সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন না করে রাশিয়ার গ্যাস কেনার উপায় নিয়ে সদস্য দেশগুলোকে দুই সেট লিখিত নির্দেশনা দিয়েছে ইইউ। তবে এরপরও আইনি পথটি ধোয়াশাচ্ছন্ন রয়ে গেছে কারণ এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ইইউ কর্মকর্তারা কোম্পানিগুলোকে গ্যাজপ্রম ব্যাংকে রুবল অ্যাকাউন্ট খুলতে না করেছেন।
ব্রাসেলসে নিযুক্ত কয়েকজন কূটনীতিক বলেছেন, সদস্য দেশগুলো যাতে রাশিয়া থেকে গ্যাস কেনা অব্যাহত রাখতে পারে সে জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ইইউর তরফ থেকে এমন আবছা ও দ্ব্যর্থমূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে তাদের ধারণা।
সবশেষ খবরে জানা গেছে, অস্ট্রিয়ার বৃহত্তম গ্যাস কোম্পানি ওএমভি রাশিয়ার গ্যাসের মূল্য পরিশোধের জন্য শুক্রবার গ্যাজপ্রম ব্যাংকে রুবল অ্যাকাউন্ট খুলেছে। একইদিন গ্যাজপ্রম ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছে ইতালির কোম্পানি এনি। এর আগে গত সপ্তাহে গ্যাজপ্রম ব্যাংকে অ্যাকউন্ট খোলে জার্মান কোম্পানি ভিএনজি। জার্মানির আরও দুটি বিতরণ কোম্পানি একই পথে হাঁটছে বলে জানা গেছে।
ইইউর একজন কূটনীতিক বলেন, ব্রাসেলসের দেওয়া অস্পষ্ট নির্দেশনা থেকে কারও মনে এমন ধারণা আসবে যে আগের মতোই যেভাবে দরকার লেনদেনের পথ খোলা রয়েছে। এতে করে ইইউর ঐক্য দুর্বল হতে পারে। কারণ কয়েকটি দেশের কোম্পানি রুবল অ্যাকাউন্ট খুলবে, আবার কিছু কোম্পানি সেটা করবে না।
ইইউর নির্দেশনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আরেকজন কূটনীতিক বলেন, তারা এক ধরনের সৃজনশীল দ্ব্যর্থতা তৈরি করেছে। এর উদ্দেশ্য হলো, কোম্পানিগুলো যাতে নিজেদের সুবিধামতো ইইউর বক্তব্যের ব্যাখ্যা ধরে নিয়ে কাজ চালাতে পারে।
ইউরোপীয় কমিশন বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কমিশনের এক মুখপাত্র বলেছেন, কোম্পানিগুলো রুবল অ্যাকাউন্ট খুলুক, এটা ‘পরামর্শযোগ্য’ নয়।