পৃথিবীতে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে৷ তাই বিয়ের আগে অবশ্যই থ্যালাসেমিয়া টেস্ট করিয়ে নিন। তা না হলে একটা ছোট্ট ভুলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে সন্তান সুখের আনন্দ৷ এক্ষেত্রে সচেতনতাই প্রতিরোধের একমাত্র পথ।

thalassemia red blood cells

থ্যালাসেমিয়া একটি জিনগঠিত অসুখ৷ এই রোগ বাবা-মা থেকে পরবর্তী প্রজন্মে বাহিত হয়৷ মানবদেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোজম থাকে এবং এর প্রত্যেকটির কাজ আলাদা আলাদা। ১১তম ক্রোমোজমটি থ্যালাসেমিয়া। অন্য দিকে এক একটি ক্রোমোজমে একজোড়া করে জিন থাকে৷ এই দু’টি জিনের একটি জিন ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি হবে থ্যালাসেমিয়া কেরিয়ার আর দু’টিই ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা হবে থ্যালাসেমিয়া ডিজিজ হবে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তের মানে হল কোনও শিশুর দুটো জিনই ক্ষতিগ্রস্ত৷ বাবা-মা থ্যালাসেমিয়া কেরিয়ার হলে শিশুর থ্যালাসেমিয়ার রোগ হবে। বাবা-মা উভয়ই থ্যালাসেমিয়ার কেরিয়ার হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ২৫ শতাংশ, থ্যালাসেমিয়া কেরিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ এবং স্বাভাবিক শিশু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ২৫ শতাংশ। আবার, বাবা-মা দুজনের মধ্যে একজন থ্যালাসেমিয়ার কেরিয়ার হলে বাচ্চার থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না৷ এক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখা জরুরি, থ্যালাসেমিয়ার কেরিয়ার হওয়া কোনও রোগ নয়৷

শিশু জন্মানোর পর দেহ যদি জীর্ণ হয়, বুকের পাঁজর গোনা যায়, কঙ্কালসার, দেখতে অন্যরকম, রক্তাল্পতা, মুখ লম্বাটে, মাতৃদুগ্ধ খাওয়ার সময খুব হাঁপিয়ে গেলে বুঝবেন শিশুটি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। এসব থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ। জন্মের পর শিশুর দেহে মায়ের রক্তই থাকে, এরপর ধীরে ধীরে আপনা আপনিই বাচ্চার শরীরে রক্ত তৈরি হয়৷ ৩-৬ মাস পর শিশু নিজের মতো করে রক্ত তৈরি করতে সক্ষম হয়৷ তাই বাচ্চা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কিনা সেটি এক বছর পর রক্ত পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে। থ্যালাসেমিয়া রোগের রকমফের রয়েছে। যেমন বিটা থ্যালাসেমিয়া, ই-বিটা থ্যালাসেমিয়া খুবই মারাত্মক৷ এছাড়া ইথ্যালাসেমিয়া নামের এক ধরনের থ্যালাসেমিয়া আছে যেটি আসলে থ্যালাসেমিয়া রোগ নয়৷ একে হিমোগ্লেবিনপ্যাথি বলা হয়।

থ্যালাসেমিয়া রোগের সে ধরণের কোনও চিকিৎসা নেই৷ সমস্যা হল, থ্যালাসেমিয়ার রোগীরা সাধারণ মানুষের মত নিয়মিতভাবে শরীরে রক্ত তৈরি করতে পারে না৷ এসব রোগীদের মূল সমস্যাটি হল রক্তে প্রোটিনের সমস্যা অর্থাৎ তাদের রক্তের হিমোগ্লোবিনের ‘গ্লোবিন’ অংশটির প্রয়োজন পড়ে। এর মানে রক্তের উপাদান প্রোটিন ও আয়রনের মধ্যে প্রোটিন অংশের প্রয়োজন পড়ে শুধু৷ কিন্তু রক্তে প্রোটিন এবং আয়রন অংশ আলাদা করা সম্ভব নয়৷ প্রোটিনের প্রয়োজন মেটাতে তাই রক্তের মাধ্যমে শরীরে প্রোটিনের পাশাপাশি আয়রনও প্রবেশ করে৷ তাতে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হলে কিন্তু আয়রনের মাত্রা বাড়তে থাকে৷ ফলস্বরুপ রোগীর শরীরে প্লীহা, কিডনি, হার্ট ইত্যাদিতে আয়রন জমা হতে থাকে৷ আয়রনের মাত্রা বেড়ে গেলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে৷ ফলে রক্ত নেওয়ার কারনে দেহে বেড়ে যাওয়া আয়রন ওষুধের সাহায্যে বের করে দেয়া হয়৷ রোগটি জিনগত হওয়ায় ওষুধ কিংবা উন্নত চিকিৎসাপদ্ধতির মাধ্যমে রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল হয় এমনটা বলা যায় না৷ তবে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন এবং জিন রিপ্লেসমেন্টের মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব। যদিও তা বিদেশে করা হয়, খরচসাপেক্ষও বটে৷

সুস্থ সন্তানের জন্য বিবাহের আগে থ্যালাসেমিয়া কেরিয়ার ডিটেকশন টেস্ট করানো জরুরি৷ দু’জনেরই যদি থ্যালাসেমিয়া কেরিয়ার হয় এক্ষেত্রে বাচ্চার থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ স্বামী-স্ত্রী দু’জনই কেরিয়ার হলে সন্তানটি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হবে এমনটা বলা যায় না। তবে একজন কেরিয়ার এবং অন্যজন স্বাভাবিক হলে ভয় নেই৷ তাই সুস্থ বিয়ের আগে টেস্ট জরুরি৷

আপনি আরও পড়তে পারেন

আট দিনে নির্মূল হবে এইডস!

মাথা ব্যথার কারণ যখন অতিরিক্ত কম্পিউটারের ব্যবহার

ওষুধ সেবনে নিয়ম না মানলে যে ক্ষতি হয়

পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা

পরিচিত পালং শাকের অজানা গুনাগুন

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.