আপনি পড়ছেন

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশিদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বলে মনে করা হয় ইতালিকে। বাংলাদেশিদেরকে তারা কর্মঠ বলে জানে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ইতালি যাওয়া অনেকের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সেই পরিস্থিতি আর নেই। এখন বাংলাদেশিদের ভালো চোখে দেখছে না দেশটির নাগরিকরা।

italy coronavirus dead

মূলত সমস্যটা শুরু হয় তথ্য গোপন করে এবং জাল কোভিড-১৯ সার্টিফিকেট নিয়ে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সেখানে যাওয়ার পর। গত ৬ জুলাই বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ একটি ফ্লাইটে রোমে যাওয়া প্রবাসীদের মধ্যে ২১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। সব মিলিয়ে গত কয়েকদিনে এখন পর্যন্ত ৩৬ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।

ইতালির বিমানবন্দরে নমুনা পরীক্ষার পর এসব প্রবাসী স্বীকার করেন, তারা ঢাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ, দশ বা আরো বেশি পরিমাণ টাকা দিয়ে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছেন। সে ঘটনার জের ধরে পরবর্তীতে কাতার এয়ারওয়েজের আরেকটি ফ্লাইটে থাকা ১২৫ বাংলাদেশিকে বিমানবন্দরে নামতে দেয়া হয়নি দেশটির কর্তৃপক্ষ। তাদের একই ফ্লাইটে আবার ফেরত পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যকার সব ধরনের ফ্লাইট আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করে দিয়েছে ইতালি সরকার।

পরবর্তীতে এসব ঘটনা নিয়ে ইতালির প্রভাবশালী প্রায় সবগুলো গণমাধ্যমে বাংলাদেশকে জড়িয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগ গণমাধ্যমের শিরোনামে বলা হয়েছে, ‌'বাংলাদেশে ভুয়া কোভিড-১৯ সার্টিফিকেট দেয়া হয়'।

শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ইল মেসেজেরো (দ্য মেসেঞ্জার) তাদের প্রধান শিরোনামে বাংলাদেশকে নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। সেখানে শিরোনাম দেয়া হয়েছে, 'বাংলাদেশ থেকে ভুয়া করোনার সার্টিফিকেট'। একই রকম শিরোনাম করেছে আরেক প্রভাবশালী দৈনিক লা নুয়োভা। তাদের বেশিরভাগ গণমাধ্যমেই এখন আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু বাংলাদেশের ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট।

italy corona

এ বিষয়ে সেখানে বসবাস করা এক প্রবাসী মুঠোফোনে বলেন, ইতালিতে করোনা পরিস্থিতি বর্তমানে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু গত কয়েকদিনে বাংলাদেশ থেকে যে কয়টা ফ্লাইট ইতালিতে গেছে, তার প্রায় সবগুলোতেই কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তারা সবাই বাংলাদেশ থেকে ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে গেছেন। ফলে নতুন করে সেখানে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এর ফলে সেখানে এখন বাংলাদেশিদের সুনজরে দেখা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশ থেকে করোনারোগী আসার বিষয়ে গণমাধ্যমগুলোতে আলোচনা চলছে। সোমবার এই ২১ জন শনাক্ত হওয়ার পর সেই আলোচনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এতদিন কর্মঠ হিসেবে বাংলাদেশিদের বেশ সুনাম ছিল। কিন্তু এখন চীনা নাগরিকদের মতো বাংলাদেশিরাও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

এদিকে, ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সেখানে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। এদের মধ্যে কতজন ইতালিতে আর কতজন বাংলাদেশে আছেন, তার সঠিক সংখ্যা কারো কাছে নেই। ইতালির বাইরে যারা আছেন তারা ৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশটিতে ঢুকতে পারবেন না। এতে করে কাজ হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ নাগরিকদের বৈধ করার সুযোগ দেয়ার কথা বলেছিল ইতালি সরকার। এখন বাংলাদেশিরা সেই সুযোগ পাবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।