আপনি পড়ছেন

বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নারীই ওড়না ব্যবহার করেন। কিন্তু প্রথম শ্রেণির নতুন পাঠ্যবইয়ে ‘ও’ স্বরবর্ণ দিয়ে ‘ওড়না’কে পরিচয় করিয়ে দেয়া নিয়ে শুরু হয়েছে অযাচিত সমালোচনা। সমালোচকদের যুক্তি হলো, একজন শিশুকে ওড়নার মতো পোশাকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তার মানসিকতাকে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আটকে ফেলা হচ্ছে। কেউ বলছেন, ওড়না কী তা শিখিয়ে শিশুকে লিঙ্গবৈষম্য শেখানো হচ্ছে। কিন্তু তাদের এই যুক্তি কতোটা যৌক্তিক? কোন পোশাক পরতে হবে, এমন শিক্ষা তো শিশুকে ছোটবেলাতেই দেয়া উচিত।

controversy about scarf

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে জনপ্রিয় রেডিও জকি কিবরিয়া সরকার লিখেছেন, ‘শিশুদের বইয়ে ‘ও’ তে ওড়না চাই, এমন কথা লেখাতে অনেকেই ক্ষেপেছেন। বাঘা বাঘা লেখকও আছে এর মধ্যে। বিশাল একেকটা আর্টিকেল লিখেছেন এই ওড়না চাওয়া নিয়ে। সেইসব লেখার মূলকথা মূলত দুইটি: ১. বাচ্চা শিশুর গায়ে ওড়না চাপানো মানে তাকে একটি মনোজাগতিক বিশেষ সীমাবদ্ধ পরিবেশে ফেলা। ২. অনেকেই এটাকে ধর্মীয় রক্ষণশীল আচরণ মনে করছেন।’

অথচ সত্যিকারের বিতর্ক হওয়ার কথা যা নিয়ে, সে বিষয়ে ওড়নার সমালোচকরা নীরব। কিবরিয়া লিখেছেন, “ ‘অ’ তে অজগর টি আসছে তেড়ে। এখানে কোন সমস্যা নাই। অজগরকে জীবনে তেড়ে আসতে দেখি নাই, এবং অজগড় তেড়ে আসলে সেটা শিশু মনে ভয়ের ব্যাপার; এগুলা নিয়ে কাউকে কোন দিন কিছু বলতে শুনলাম না। ‘আ’ তে আমটি আমি খাবো পেড়ে। কারো গাছের আম পেড়ে খাওয়া যে চুরি, এটা কেউই কোনদিন আলোচনায় আনে নাই। ‘দাদার হাতে কলম ছিলো, ছুড়ে মেরেছে, উহ...বড্ড লেগেছে’। কলম ছুড়ে মারা যে চরম অন্যায়, কই কেউ তো বললো না। আজ শুধু শুনেছে ওড়না চাই, ওমনি শুরু হয়ে গেছে। কারণ এই ওড়নার মধ্যে মৌলবাদী গন্ধ আছে।"

এরপর কিবরিয়া সরকার তার পোস্টে লিখেছেন, ‘আহমদ ছফার ‘বুদ্ধি বৃত্তির নতুন বিন্যাস’ টা যারা পড়েন নি, পড়ার অনুরোধ করছি। এই ধরনের বুদ্ধিজীবিরা আমাদের বিভ্রান্ত করে তাদের ইন্টারেষ্টের জন্যে। এরা যদি অজগর, আম পাড়া, দাদুর হাতের কলম ছুড়ে মারা নিয়ে সমালোচনা করতো, তো ওড়না আজ চাওয়া লাগতো না। এরা শিশুদের বইয়ে মৌলবাদ খুঁজে বের করে শিশুর মনে মৌলবাদ স্টাবলিশ করে দিচ্ছে। এরাই আসল মৌলবাদী।’

ওড়না একজন নারীকে শালীন করে তুলে। এ ছাড়া ওড়না নারীর পর্দার ধর্মীয় বিধানকেও যথাযথভাবে পালনের সুযোগ করে দেয়। ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের নারীরাও ঐতিহ্যগতভাবে ওড়না ব্যবহার করে আসছেন। তারপরও ওড়নার মতো পোশাক নিয়ে বিতর্কের পিছনে নিশ্চয় কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে।

সমালোচকরা বলছেন, প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে একজন নারী যেমন ইচ্ছা তেমন পোশাক পরতে পারেন। তাকে কেনো শিশু অবস্থাতেই পোশাক চেনাতে হবে! সমালোচকদের এমন যুক্তির অন্তঃসার শূন্যতা বুঝতে মহাজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। এ কথা যে কেউ বুঝে যে, ছোটবেলা ওড়না না পরিয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর হঠাৎ ওড়না ধরিয়ে দিলে একজন মানুষ তা সহজে গ্রহণ করতে পারবে না। কী পোশাক পরতে হবে, এমন মৌলিক ব্যাপারগুলো মানুষকে শিশুবেলাতেই শেখানো উচিত।

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর