অবশেষে জুবায়েরের জামিন
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
একের পর এক হয়রানিমূলক মামলায় জামিন এবং তারপর নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ড- এভাবে দীর্ঘ ২৩ দিন ভোগান্তির পর অবশেষে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেলেন ভারতীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়ের। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আজ তাকে জামিনে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে আদালত মোহাম্মদ জুবায়ের যাতে টুইটারে কোনো পোস্ট না করেন সে বিষয়ে উত্তর প্রদেশ সরকারের একটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট অল্ট নিউজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়েরকে মুক্তি দিতে দিল্লির তিহার জেল কর্তৃপক্ষকে আদেশ দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচুড়, বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি এএস বোপান্নাকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ মোহাম্মদ জুবায়েরের বিরুদ্ধে উত্তর প্রদেশ পুলিশের নিবন্ধিত ৭টি এফআইআর একই অভিযোগে দিল্লি পুলিশের কৃত এফআইআরের সঙ্গে গ্রন্থিবদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে একই বিষয়ে তার বিরুদ্ধে কোনো এফআইআর হলে সেগুলোও একসঙ্গে গ্রন্থিবদ্ধ ও দিল্লি পুলিশের কাছে স্থানান্তর করতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।
টুইটের বিষয়ে নতুন করে কোনো এফআইআর হলে মোহাম্মদ জুবায়ের সেসব মামলায় জামিনযোগ্য বিবেচিত হবেন বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন। একইসঙ্গে সর্বোচ্চ আদালত তাকে নিবন্ধিত সব এফআইআর খারিজের জন্য দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবার এখতিয়ার মঞ্জুর করেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, অভিযোগ পেলে কাউকে গ্রেপ্তারের যে এখতিয়ার পুলিশকে দেওয়া হয়েছে, সেটা অবশ্যই বিচার-বিবেচনার ভিত্তিতে সংবেদনশীলভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
গত মাসের শেষদিকে মোহাম্মদ জুবায়েরের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে এক এফআইআর নিবন্ধনের পর তাকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ। ২০১৮ সালে টুইটারে জুবায়েরের একটি পোস্টে ধর্মীয় অনুভূতি আহত হয়েছে বলে রামভক্ত হনুমান নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে গত মাসের শেষ সপ্তাহে টুইট করা হয়। রামভক্ত হনুমান নামের অ্যাকাউন্টটি খোলা হয় ২০২১ সালে। ফলোয়ারবিহীন সন্দেহজনক ওই অ্যাকাউন্ট থেকে এর আগে কোনো পোস্ট করা হয়নি।
রামভক্ত হনুমানের অ্যাকাউন্টের টুইট আমলে নিয়ে মোহাম্মদ জুবায়েরের বিরুদ্ধে এফআইআর নিবন্ধন ও তাকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ। এর একদিনের মাথায় টুইটার থেকে রামভক্ত হনুমানের অ্যাকাউন্টটি গায়েব হয়ে যায়।
টুইটের কারণ দেখিয়ে মোহাম্মদ জুবায়েরের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হাস্যকর অভিহিত বলে অভিহিত করেন ভারতের মানবাধিকার সংগঠক ও সংবাদকর্মীরা।
অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার সাবেক প্রধান আকার প্যাটেল বলেন, ১৯৮৩ সালে পরিচালক হৃষিকেশ মুখার্জির নির্মিত ছবি ‘কিসিকো না কেহনা’ ভারতের সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়ে দর্শক সমাদৃত হয়েছে। প্রায় চার দশক হতে চললেও ছবিটির কোনও অংশ নিয়ে কেউ এতদিন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত পাবার কথা বলেননি। অথচ একটি ভিত্তিহীন ও সন্দেহভাজন টুইটের অভিযোগ দেখিয়ে মোহাম্মদ জুবায়েরকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ‘কিসিকো না কেহনা’ ছবিতে অভিনেতা ফারুক শেখ তার নবপরিণীতা স্ত্রীকে নিয়ে মধুচন্দ্রিমায় যান। সমুদ্র তীরবর্তী একটি শহরে ‘হানিমুন হোটেল’ খুঁজতে গিয়ে তিনি দেখতে পান সেটির নাম পাল্টে ‘হনুমান হোটেল’ করা হয়েছে। এই ‘হনুমান হোটেলের’ সাইনবোর্ডের স্ক্রিনশটটিই টুইট করেছিলেন মোহাম্মদ জুবায়ের।
ভারতীয় সাংবাদিক আলিশান জাফরি জানান, ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের বিভিন্ন স্থান ও স্থাপনার নাম পাল্টানোর হিড়িক শুরু হয়। মুঘল সরাই রেল স্টেশনের নাম পাল্টে পন্ডিত দীন দয়াল উপাধ্যায় জংশন, বিজেপির প্রধান কার্যালয়ের সামনের সড়ক আকবর রোডের নাম পাল্টে দীন দয়াল উপাধ্যায় মার্গ, এলাহাবাদ শহরের নাম পাল্টে প্রজ্ঞারাজ করা হয়েছে। এমন নামকরণকে ব্যঙ্গ করে ওই টুইট করেছিলেন মোহাম্মদ জুবায়ের।
আলিশান বলেন, নির্দোষ একটি টুইটের অজুহাত দেখিয়ে মোহাম্মদ জুবায়েরকে দিল্লি, হাথরাস, ব্যাঙ্গালোর, সীতাপুর, লাখিমপুর এমন নানা শহরে পুলিশী হেফাজত ও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ভারতের বিজেপিপন্থী গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিত্রিত করার চুড়ান্ত চেষ্টা চালিয়েছে। উত্তর প্রদেশ পুলিশ তাকে হয়রানির জন্য বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করেছে।
সাংবাদিক রোহিনী সিং বলেছেন, জুবায়েরকে গ্রেপ্তারের আসল কারণ তার টুইট নয়, বরং অনলাইনে মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে অল্ট নিউজের সরব ও সক্রিয় ভূমিকার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারণ ভারতের ক্ষমতাসীনরা জানে যে মিথ্যা প্রচারণাই তাদের রাজনীতির আসল পুঁজি। জুবায়েরের কার্যক্রম তাদের রাজনীতিতে বাধা হয়ে উঠেছে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আজকের রায়ে বলেছেন, যেহেতু দিল্লি পুলিশের স্বপ্রণোদিত এফআইআরের ভিত্তিতে দায়েরকৃত মামলায় জুবায়ের আগেই জামিন পেয়েছেন, এ অবস্থায় একই ইস্যুকে কেন্দ্র করে নিত্যনতুন মামলায় তাকে আটক রাখার কোনো যুক্তি নেই। দিল্লি পুলিশ যেহেতু মামলার তদন্ত কাজ অনেকটুকু এগিয়ে নিয়েছে, তাই নতুন মামলাগুলোর তদন্তভারও তাদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। যেহেতু দিল্লি পুলিশের তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে, তাই উত্তর প্রদেশ পুলিশের গঠনকৃত বিশেষ তদন্ত টিম (এসআইটি) ভেঙে দিতে হবে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.