চীনা নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে অভিজাতদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে মধ্যবিত্তরা
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীনে কমিউনিস্ট পার্টির সাত দশকের শাসনামলে দেশটির অভিজাত শ্রেণির নাগরিকদের অন্য দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক ছিল না। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের শাসনামলে তা ব্যাপকভাবে দেশত্যাগের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
চীনা নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে অভিজাতদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে মধ্যবিত্তরা
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, মুক্ত বাক-সন্ধানী, শিক্ষাবিদ, অ্যাক্টিভিস্ট এবং এমনকি ব্যবসায়িক টাইকুন, সেলিব্রিটিদের ওপর কঠোর দমন-পীড়ন ব্যাপকভাবে তাদের দেশত্যাগের দিকে পরিচালিত করেছে। এখন, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন কঠোর লকডাউন এবং সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, কারণ এটি মানুষের জীবিকার ওপর আঘাত হেনেছে। এসব পরিস্থিতি দেশটির মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে বসবাসের জন্য অন্য দেশ খুঁজতে বাধ্য করছে। আশ্রয় পেতে নানা অসুবিধা সম্পর্কে লোকেরা সচেতন হওয়া সত্ত্বেও গত তিন বছরে আবেদনের সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের মতে, ২০১২ সালে চীন থেকে আশ্রয়প্রার্থীর বার্ষিক সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৩৬২। ২০২০ সালে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ৮ হাজার ৭১-এ। চলতি বছরে ১ লাখ ২০ হাজার অতিক্রম করেছে। জিনপিংয়ের শাসনামলে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করা মোট লোকের সংখ্যা ৬ লাখ ১৩ হাজারের বেশি।
চীনের মূল ভূখণ্ড এবং হংকংয়ে বসবাসকারী লোকেরা বিদেশে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডায় স্থায়ী হওয়ার জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আইভি কুই, যিনি সাংহাইতে একটি অভিবাসন সংস্থা চালান তিনি বলেন, মানুষজন আতঙ্কিত এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা চীন ছেড়ে যেতে চায়।
চীনে কঠোর বিধিনিষেধ, কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং ভিন্নমত ও বাকস্বাধীনতার ওপর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে জনগণের তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট জিনপিং ব্যবসা থেকে শিক্ষা-বিনোদন পর্যন্ত প্রতিটি খাতকে তার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছেন। তার এই অনধিকারপ্রবেশ সমাজের একটি বিস্তৃত অংশকে অসন্তুষ্ট করেছে। কোটিপতিরা তাদের নাগরিকত্ব ত্যাগ করছেন। ২০২০ সালের মধ্যে পাঁচ শতাধিক অভিজাত নাগরিক চীন ছেড়েছিল। এখন কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনার নামে দমন-পীড়ন বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় এ ধরনের অনেক ধনী ব্যবসায়ী অন্যত্র বসতি স্থাপনের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
নিকোলাস সে, আর্থার চেন ফেইউ, ক্রিস উ ইফানসহ অনেক চীনা সেলিব্রিটি বিনোদন শিল্পে তীব্র দমনপীড়নের জন্য তাদের চীনা নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। সেফগার্ড ডিফেন্ডারস নামে একটি মানবাধিকার সংস্থা বলেছে যে, আরও নিপীড়নমূলক শাসন ব্যবস্থার জন্য চীন থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা উদ্বেগজনক পর্যায়ে বেড়েছে। এতে বলা হয়েছে, অনেক চীনা গণতান্ত্রিক দেশে, বিশেষ করে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে চীনে 'অভিবাসন', 'কীভাবে কানাডায় চলে যাওয়া যায়’-এর মতো বিষয়গুলো ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে অনুসন্ধান চালাতে দেখা গেছে। একটি নতুন প্রবণতা চালু হয়েছে- 'রানক্সু', কীভাবে চীন থেকে ভালোর জন্য বের হওয়া যায় তার অধ্যয়ন।
চীনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম উইচ্যাটে একটি পোস্টে একজন লিখেছেন, ‘আমরা যে শহরে বাস করি সেখানে আমাদের নিরাপদ বোধ করা উচিত। যে কারণেই হোক না কেন, এর নাগরিকরা যদি ক্রমাগত উদ্বেগের মধ্যে থাকে এবং মনে করে যে তারা তাদের মঙ্গল এবং জীবিকার জন্য শহরটির ওপর আর নির্ভর করতে পারে না, তবে এটি বিশ্বাসঘাতকতা।’
থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের পরামর্শক ক্যাথি হুয়াং বলেছেন, শুধু অভিজাতরাই নয়, এমনকি মধ্যবিত্তরাও চীনে তাদের অসন্তুষ্ট জীবনের বিকল্প খুঁজছেন।
শুধু চীনারাই নয়, দেশটিতে বসবাসকারী বিদেশিরাও কঠোর লকডাউন এবং পশ্চিমবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধির কারণে চীন ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সাংহাইয়ে বিদেশি বাসিন্দা ২০ শতাংশ কমেছে। ২০১১ সালে ২ লাখ ৮ হাজার থেকে ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজারে। বেইজিংয়ে এক দশকে ৬৩ হাজার বিদেশি বাসিন্দাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
সাংহাইয়ের একটি রেস্তোরাঁর মালিক হ্যারি হু বলেছেন, ‘আমি অতীতে বেশ কয়েকবার চীন ছেড়ে যাওয়ার কথা ভেবেছি এবং ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন আমি চলে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।‘
এদিকে, নাগরিকদের ব্যাপকভাবে দেশত্যাগের বিষয়টি জিনপিং সরকারকে শঙ্কিত করেছে। তারা এটি বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে।
সূত্র: হংকং পোস্ট
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.