জলবায়ু লড়াইয়ে ঐতিহাসিক বিলে বাইডেনের সই

জলবায়ুর পরিবর্তনবিরোধী লড়াইয়ে একটি মাইলফলকে পৌঁছল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বিশাল অঙ্কের বরাদ্দের জলবায়ু বিলে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার সইয়ের মধ্য দিয়ে বিলটি আইনে পরিণত হলো। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের কার্বন নিংসরণ ৪৪ শতাংশ কমিয়ে আনাসহ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় প্যাকেজটিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৬৯ বিলিয়ন ডলার। বিলটি পাসকে বাইডেন ও তার দল ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য বড় বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। খবর বিবিসি ও সিএনএন।

জো বাইডেন, ফাইল ছবি

প্রেসিডেন্ট বাইডেন স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু, স্বাস্থ্যসেবা ও করপোরেট ট্যাক্স সংক্রান্ত বিলটিতে চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। ‘ইনফ্লাশন রিডাকশন অ্যাক্ট’ নামের এই বিলের লক্ষ্য মূলত ধনীদের ওপর ট্যাক্স বাড়িয়ে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় নির্বাহ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা। এরমধ্যে জলবায়ু মোকাবেলায় বরাদ্দ ৩৬৯ বিলিয়ন ডলার।

বিলটি গত শুক্রবার মার্কিন কংগ্রেসের নিন্মকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে পাস করেন সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্রেটরা। এরপরই তা চূড়ান্ত আইনে পরিণত করতে বাইডেনের টেবিলে যায়। এর আগে গত ৭ আগস্ট পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটাভুটিতে বিলটি পাস হয়। বিলটি নিয়ে তখন রিপাবলিকানরা বিরোধিতা করলেও টিকতে পারেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে জলবায়ুখাতে ঐতিহাসিক এ আইনের আওতায় কোনও কোম্পানিকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে না। তবে যেসব কোম্পানি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করবে, প্রণোদনা পাবে তারা। এছাড়া ইলেক্ট্রিক গাড়ির ক্রেতা কিংবা জ্বালানি সাশ্রয়ী বাড়ি তৈরিতে বিনিয়োগকারীরাও প্রণোদনা পাবেন।

বিলটিতে সই করার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, এটি তার অভ্যন্তরীণ কর্মসূচির চূড়ান্ত অংশ। জলবায়ু ইস্যুতে এগিয়ে যাওয়ার বৃহত্তম পদক্ষেপ এ বিল।

বাইডেন বলেন, এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে ডেমোক্র্যাটরা আমেরিকান জনগণের পক্ষে এবং প্রতিটি রিপাবলিকান বিশেষ স্বার্থের পক্ষে ছিল। কংগ্রেসের প্রতিটি রিপাবলিকান এই বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী হেরেছে এবং আমেরিকার জনগণ জিতেছে।

ডেমোক্র্যাটদের দাবি, এই আইন ফেডারেল ঘাটতি কমিয়ে মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলায় সহায়তা করবে। আইনটি ওষুধের দাম নিয়ে আলোচনা করার অনুমতি দেবে এবং করপোরেশন ও ধনীদের পাওনা ট্যাক্স পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

তবে বিরোধীদল রিপাবলিকান পার্টির সিনেটে নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, নতুন আইনে বিপরীত প্রভাব পড়বে। ডেমোক্র্যাটরা গত বছর রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতিতে জাতিকে ভুগিয়েছে। ফের একই সংকটে পড়তে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। পক্ষপাতদুষ্ট বিলে স্বাক্ষর করার অর্থই হল- উচ্চ কর, জ্বালানির উচ্চ বিল এবং আক্রমনাত্মক আইআরএস অডিটে মানুষের ভোগান্তি।

মার্কিন রাজনীতিবিদরা যাই বলুন, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

মার্কিন বিজ্ঞানীরা বলছেন, আইনটির মাধ্যমে জলবায়ুর উষ্ণতা হ্রাস করা সম্ভব হবে। আইনটি ভবিষ্যতের গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে হ্রাস করবে। এই প্রভাব খুব বেশিও নয়, আবার কমও নয়।

ক্লাইমেট অ্যানালিটিক্সের অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক পরিচালক বিল হেয়ার বলেন, এই আইনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু নীতিতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এর আগের আইনগুলোতে অনেক কথা আছে, কিন্তু খুব বেশি পদক্ষেপ ছিল না।

প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী গ্যাব্রিয়েল ভেচি বলেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান বিশাল। সুতরাং আইনটি অবশ্যই বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলবে।