জেলেনস্কা: ব্রিটিশরা কড়ি গুনছে, আমরা গুনছি লাশ

রাশিয়ার সামরিক হামলায় বিপর্যস্ত ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কা বলেছেন, ব্রিটিশরা যখন কড়ি গুনছে, ইউক্রেনীয়রা তখন গুনছে লাশ। বিবিসির সাংবাদিক লরা কুয়েনসবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেছেন জেলেনস্কা। সম্প্রতি কিয়েভে ধারণ করা ওই সাক্ষাৎকার আজ রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) প্রচারিত হয়েছে।

ওলেনা জেলেনস্কা

ইউক্রেনে ছয়মাসের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। এই যুদ্ধের কারণে খাদ্য-জ্বালানি সংকটসহ বিরূপ অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে পুরোবিশ্বেই। মহামারি করোনাকালের ধাক্কার মধ্যেই এই যুদ্ধে হিমশিম খাচ্ছে অনেক দেশ। বিশেষ করে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমারা।

সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কঠিন অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে মিত্রদেশগুলোর ওপর। এই যুদ্ধ শেষ করতে ইউক্রেনকে সমর্থন-সহায়তা যত জোরালো হতো, তত দ্রুতই সংকট কেটে যেত।

গত মাসে কিয়েভ সফরে এসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছিলেন, যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে।

বরিসের এই বক্তব্যকে ইঙ্গিত করে জেলেনস্কাকে বলা হয়, রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে বিশ্ব জুড়ে বেড়েছে তেল-গ্যাসের দাম। বিশেষ করে জ্বালানির জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে ব্রিটিশদের। তাই ব্রিটিশদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান কি না? এ প্রশ্নের জবাবে জেলেনস্কা বলেন, পরিস্থিতি যে খুবই কঠিন, সেটি বুঝতে পারছি। তবে করোনা মহামারির সময়টা স্মরণ করুন। মহামারি এখনো কাটেনি। মহামারির সময় সব জায়গায় যেমন দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ইউক্রেনেও।

ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি বলেন, সব জায়গায় দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, ইউক্রেনেও বাড়ছে। তবে সেই সঙ্গে ইউক্রেনের মানুষের প্রাণ যাচ্ছে যুদ্ধে।

ব্রিটিশদের উদ্দেশে জেলেনস্কা বলেন, তোমরা যখন তোমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কিংবা পকেটে থাকা অর্থকড়ি গুনছ, আমরাও সেই কাজটি করছি। কিন্তু সেইসঙ্গে হতাহত মানুষের সংখ্যাও গুনছি আমরা।

ওলেনা জেলেনস্কা বলেন, বাইরের মানুষের পক্ষে ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রভাব বোঝাটা কঠিন। গত মার্চে ইউক্রেনের একটি ছোট্ট ছেলের কাঁদতে কাঁদতে পোল্যান্ড সীমান্ত পার হওয়ার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ফার্স্টলেডি বলেন, যেই মা-বাবাই ভিডিওটি দেখেছেন, আমার বিশ্বাস, তারা কেউই চোখের পানি সামলাতে পারবেন না। 

জেলেনস্কা বলেন, সব সময় আমি নিজেকে ওই জায়গায় কল্পনা করি। বিশ্বের সব মানুষেরই আমার মতো করে ভাবা উচিত।

জেলেনস্কা বলেন,  ওই ছেলেটির মতো হাজারো গল্প আমাদের বলে যেতে হবে, বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। কারণ, ওই গল্পগুলোও যুদ্ধ। কতগুলো বোমা পড়েছে, অর্থ কতটা খরচ হয়েছে, সেটা বিষয় নয়, আসল হলো মানুষের গল্প। যুদ্ধে সৃষ্ট মানবিক সংকটের বিষয়টি বিশ্বের কাছে তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ।