ইইউ কমিশন প্রধান: জ্বালানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে সরবরাহ কমিয়ে এবং বাজার কারসাজি করে জ্বালানিকে একটি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করার অভিযোগ করেছেন ইইউ কমিশনের প্রধান। গতকাল সোমবার এক টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, এই কারসাজির পরও রাশিয়া পরাজিত হবে। খবর আনাদোলু।

ইইউ কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লেইন

ইইউ কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লেইন মন্তব্য করেন, পুতিন আমাদের জ্বালানি বাজারের সরবরাহ কমিয়ে এবং কারসাজি করে শক্তিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হবেন এবং ইউরোপই জয়ী হবে।

আসন্ন সংকট মোকাবেলায় কমিশন একটি প্রস্তাব প্রস্তুত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি বিদ্যুতের চাহিদা এবং পাইপলাইন গ্যাসের মূল্যসীমা হ্রাস করার লক্ষ্যে কাজ করবে। দুর্বল ভোক্তা, ব্যবসায়ীদের সহায়তার পাশাপাশি তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের চাহিদা পূরণের দিকেও বিশেষ লক্ষ্য রাখবে।

নর্ড স্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইন বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া

রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা গ্যাজপ্রম নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইন থেকে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের চালান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পর ইউরোপে গ্যাসের দাম অনেকখানি বেড়ে গেছে।

গত ৩১ আগস্ট গ্যাজপ্রম মেরামতের জন্য পাইপলাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ২ সেপ্টেম্বর পুনরায় চালু করার কথা থাকলেও ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ঘোষণা দেন, তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এমন ঘোষণার পরপরই গ্যাসকে ‘সমরাস্ত্র’ বানানোর অভিযোগে রাশিয়াকে দোষারোপ করছে গোটা ইউরোপ।

প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রুশ হস্তক্ষেপের প্রেক্ষিতে মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে জ্বালানির মূল্য বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি গ্যাসলাইন বন্ধ করে দেওয়ায় আরও বিপাকে পড়েছে ইউরোপের দেশগুলো। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ইউরোপের দেশগুলো আসন্ন শীত মোকাবেলায় যথেষ্ট পরিমাণ জ্বালানি পাবে না।

রাশিয়ার নর্ড স্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইনটি সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছাকাছি উপকূল থেকে উত্তর-পূর্ব জার্মানি পর্যন্ত বিস্তৃত। ২০১১ সালে পাইপলাইনটি চালু হয়। এর মাধ্যমে প্রতিদিন ইউরোপে গড়ে ১৭ কোটি ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করত রাশিয়া। মাঝে কয়েকবার বন্ধ করলেও শেষ পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ আবারও চালু করেছিল রাশিয়া। কিন্তু গত ৩১ আগস্ট মেরামতের অজুহাতে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় তারা। নর্ডস্ট্রিম ওয়ানের পাশাপাশি পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইয়ামাল পাইপলাইনও গত মে মাসে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রাশিয়া অনেক আগে থেকেই এ ব্যাপারে হুমকি দিয়ে আসছিল। তবে ইউরোপের দেশগুলো দাবি করছিল, তারা কেবল রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল নয়, অন্য মাধ্যম থেকেও জ্বালানি সংগ্রহ করতে পারবে।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এমনিতেই বিশ্বজুড়ে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজির দাম বাড়তির দিকে। তারওপর কাতার বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো এলএনজি রফতানিকারক দেশ থেকে সমুদ্রপথে এলএনজি আমদানি করাও বেশ সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল ব্যাপার। ফলে আসন্ন শীতে বড় ধরনের সংকটে পড়তে যাচ্ছে ইউরোপ।