কেবল জ্বালানি বেচেই রাশিয়ার পকেটে ১৫৮ বিলিয়ন ইউরো

ইউক্রেন আক্রমণের পর গত ছয় মাসে জ্বালানি রপ্তানি করে রাশিয়া আয় করেছে ১৫৮ বিলিয়ন ইউরো (১৫,৭০০ কোটি ডলার)। এরমধ্যে অর্ধেক রপ্তানি আয় এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে। ফিনল্যান্ডভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) এ তথ্য জানিয়েছে।

তৃতীয় পক্ষের দেশে রাশিয়ার তেল রপ্তানি ঠেকাতে ইউরোপীয় মালিকানাধীন জাহাজে রুশ তেলের চালান বহন বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে সিআরইএ

সিআরইএ বলেছে, বিশ্ব বাজারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ফায়দা হয়েছে রাশিয়ার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটির জ্বালানি রপ্তানির পরিমাণ কমলেও রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ঢের বেশি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কার্যকর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ইউক্রেন আক্রমণের জেরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস, কয়লা ও অন্যান্য জ্বালানি পন্যের দাম হু হু করে বেড়েছে। রাশিয়া থেকে সরবরাহ বন্ধের পর ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম গত কয়েক দিনে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে। তেলের দাম প্রথমে বেড়ে গিয়ে পরে কিছুটা কমলেও গ্যাসের দামের ঊর্ধ্বগতি থামছে না।

সিআরইএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন দখলের পর জীবাশ্ম জ্বালানি বিক্রির আয় থেকে ৪ হাজার ৩০০ কোটি ইউরো (৪,২৭০ কোটি ডলার) রাশিয়ার কেন্দ্রীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের তহবিল জোগাতে সহায়তা করেছে।

সিআরইএর তথ্য মতে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের পরবর্তী ছয় মাসে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির সবচেয়ে বড় আমদানিকারক ইইউ। এ সময়ে ইইউ রাশিয়া থেকে ৮,৫১০ কোটি ইউরোর (৮,৪৫০ কোটি ডলার) জ্বালানি আমদানি করেছে।

ইইউ’র পর রুশ জ্বালানি বড় আমদানিকারকের মধ্যে রয়েছে চীন ও তুরস্ক। গত ছয় মাসে চীন রাশিয়া থেকে ৩,৪৯০ কোটি ইউরো (৩,৪৬৫ কোটি ডলার) মূল্যমানের জ্বালানি কিনেছে। একই সময়ে তুরস্ক রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে ১০৭০ কোটি ইউরো (১০৬২ কোটি ডলার) মূল্যমানের জ্বালানি।

ইইউ এরইমধ্যে রাশিয়া থেকে কয়লা কেনা বন্ধ করেছে। রুশ তেলের ক্ষেত্রে ইইউ ক্রমশ আমদানি নিষিদ্ধের কৌশল নিয়েছে। রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে কোনো সীমা আরোপ করেনি ইইউ, কারণ রুশ গ্যাসের ওপর ইউরোপীয় দেশগুলোর নির্ভরতা অনেক বেশি।

রাশিয়া থেকে কয়লা আমদানিতে ইইউর নিষেধাজ্ঞা কাজে এসেছে উল্লেখ করে সিআরইএ বলেছে, ইইউ কয়লা আমদানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর রাশিয়া থেকে পণ্যটির রপ্তানি কমে গেছে। ইইউর সমান পরিমাণ কয়লা কিনবে এমন বিকল্প কোনো ক্রেতা খুঁজে পায়নি মস্কো।

রাশিয়ার তেল রপ্তানির বিরুদ্ধে আরও কঠোর বিধিনিষেধ প্রণয়ন ও সেগুলো জোরালোভাবে বলবত করতে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সিআরইএ। এজন্য বৈশ্বিক সমুদ্র পরিবহন ব্যবস্থায় যুক্তরাজ্য ও ইইউকে প্রভাব খাটানোর প্রস্তাব দিয়েছে সিআরইএ।

সিআরইএ বলেছে, ইইউকে অবশ্যই ইউরোপীয় মালিকানাধীন জাহাজে রুশ তেল পরিবহন এবং এ কাজে ইউরোপের বন্দর ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করতে হবে। যুক্তরাজ্যকে পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে তাদের ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো রুশ তেলের চালানে বীমা সুবিধা দিতে না পারে।