রাজধানী ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাসজনিত রোগ ‘হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ’। আক্রান্তদের হাত-পাসহ শরীরে জলবসন্তের মতো ফুসকুড়ি দেখা দেয়। রোগটিতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। গত কয়েকদিনে ঢাকার অধিকাংশ হাসপাতালে দেখা মিলছে এ রোগে আক্রান্ত রোগী। চিকিৎসকরা বলছেন, রোগটি মাত্রাতিরিক্ত ছোঁয়াচে। তবে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই, সাত থেকে দশদিনের মধ্যে সেরে যায়।

hand foot and mouth diseaseভাইরাসজনিত রোগ ‘হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ’

হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ (এইচএফএম) রোগটি বাংলাদেশে আগে খুব একটা দেখা যেত না। সম্প্রতি রোগটি কিছুটা বেশি দেখা যাচ্ছে। এর লক্ষণগুলো জলবসন্তের সঙ্গে মিলে যায়। এতে অনেক সময় রোগটিকে জলবসন্তের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন অনেক অভিভাবক। এমনকি অনেকসময় এমন ভুল করে থাকেন চিকিৎসকরাও।

আগস্টের শেষদিকে এইচএফএম রোগে আক্রান্ত হয় রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মুক্তা আক্তারের দেড় বছরের মেয়েটি। মুক্তা আক্তার জানান, প্রথমে তিনি মেয়ের শরীরে একটা দুটো ফুসকুড়ি লক্ষ্য করলেন। মুক্তা বলেন, পরের দিন দেখি ফুসকুড়ি অনেক বেড়ে গেছে। ভেবেছিলাম জলবসন্ত। ডাক্তারের সঙ্গে অনলাইনে কথা বললাম, ছবি পাঠালাম। ডাক্তারও বললেন এটা চিকেন পক্স। ওষুধও দিলেন তিনি।

মুক্তা বলেন, ওষুধ খেয়েও কয়েকদিনে ফুসকুড়ি কমলো না। সঙ্গে দেখা দিল উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর ও কাশি। তখন সরাসরি ডাক্তারের কাছে নেওয়ার পর জানা গেল এটি ‘হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ’ রোগ। আক্ষেপ করে মুক্তা আক্তার বলেন, সময়মত যদি পার্থক্যটা বুঝতে পারতাম তাহলে এত কষ্ট পেত না বাচ্চাটা।

রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা মাজহার আলম জানান, কিছুদিন আগে তার ছেলের জ্বর হয়। পরের দিন দেখা যায় ছেলের হাতে, পায়ে ও মুখে ফোসকা ও র‌্যাশ বের হয়েছে। প্রথমে জলবসন্ত মনে করলেও শিশুটিকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান তিনি।  তখনই জানতে পারেন এটি হ্যান্ড ফুট মাউথ রোগ।

মাজহারুল বলেন, এক সপ্তাহের মাথায় ফুসকুড়ি কমে বাচ্চা সুস্থ হয়ে ওঠে। শুধু আমার ছেলেই নয়, আমাদের এলাকার অনেক শিশুর এ রোগ হয়েছে। এটি খুবই ছোঁয়াচে।

এইচএফএম রোগের কারণ: চিকিৎসকরা বলছেন, কক্সসাকি ভাইরাসের (coxsackievirus) কারণে রোগটি হয়। কেউ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে তিনিও আক্রান্ত হতে পারেন এ রোগে। এ ভাইরাসে যে কোনো বয়সী মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিসির মতে, আক্রান্ত রোগীর দেহের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শ এলে, আক্রান্ত রোগীর ফোসকা থেকে বের হওয়া তরল, হাঁচি ও কাশি, মুখের লালা, সর্দি, মলের মাধ্যমে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে।

রোগটির লক্ষণ: রোগটিতে হাত-পা ও মুখ বেশি আক্রান্ত হয় বলেই এর নাম হ্যান্ড-ফুট অ্যান্ড মাউথ রোগ। লক্ষণ হিসেবে প্রথমে জ্বর আসে, দুই-একদিনের মধ্যে হাত ও পায়ে র‌্যাশ দেখা দেয়। এরপর দুই হাত, কনুই, পায়ের পাতা, হাঁটু ও মুখে জলবসন্তের মতো গোটা বা ফোসকা ওঠে। কিছু কিছু ফোসকায় পানি জমে। ফোসকাগুলো কিছুটা যন্ত্রণাদায়ক হয়, চুলকানিও থাকতে পারে। অনেক সময় মুখের ভেতরেও ফুসকুড়ি দেখা দেয়। তখন শিশুরা খেতে পারে না।

রোগটি হলে করণীয়: চিকিৎসকরা বলছেন, রোগটিতে আক্রান্ত হলে ভয় না পেয়ে সতর্ক থাকা উচিত। রোগীকে সুস্থ হতে সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন লাগে।

এ বিষয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রোগটি খুব দ্রুত সংক্রমণ ঘটায়। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। আট-দশদিনের মধ্যে অসুখটি সেরে যায়। ফোসকা মিলিয়ে যেতে হয়তো আরও কয়েকদিন লাগতে পারে।

ডা. জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, এ রোগের নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। লক্ষণভিত্তিক ওষুধ দিতে হয়। জ্বর হলে শুধু প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। এছাড়া ফুসকুড়িতে লোশন লাগানো যেতে পারে। এসময় রোগীকে বেশি করে পুষ্টিকর ও ভিটামিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। তবে ফলের জুস বা এসিটিক জাতীয় কিছু না খাওয়ানোই ভালো। মুখে ঘা থাকলে শিশুকে ঝাল-মশলাবিহীন তরল বা নরম খাবার খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে স্যালাইনও দেওয়া যেতে পারে।

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.