জাতিসংঘে দেওয়া শাহবাজের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাল আফগানিস্তান

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দেওয়া বক্তৃতার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকার। ভাষণে শাহবাজ শরিফ বলেছিলেন, আফগানিস্তানে এখনও বিভিন্ন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উপস্থিতি রয়ে গেছে, যা প্রতিরোধে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। খবর ট্রিবিউন এক্সপ্রেস।

জাতিসংঘে শাহবাজ শরিফ

আফগানিস্তান থেকে এখনও আলকায়েদা, আইএসআইএল, টিটিপিসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে দাবি করে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) শাহবাজ শরিফ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন আফগান কর্তৃপক্ষের সমর্থন ও সহযোগিতায় এসব গোষ্ঠীকে সফলভাবে মোকাবেলা করতে হবে।

তার এ বক্তব্য পাকিস্তান ও আফগান অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে একটি নতুন কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়েছে। ইসলামিক আমিরাতের প্রশাসন এ বক্তব্যকে ভালোভাবে নেয়নি। পাকিস্তানের এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তানসহ বেশ কিছু দেশ জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে আফগানিস্তানে এখনও সন্ত্রাসবাদের হুমকি রয়েছে, যা মোটেও সত্য নয়।

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মানচিত্র

আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, তাদের এই উদ্বেগগুলো ভুল তথ্য ও উৎসের ওপর ভিত্তি করে উত্থাপিত হচ্ছে। কারণ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এখনও জাতিসংঘে আফগানিস্তানের আসনটি সঠিক দাবিদার আফগান সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে করেনি।

আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দাবি করেন, যদি জাতিসংঘে বর্তমান আফগান সরকারকে আসনটি দেওয়া হয়, তাহলে তাহলে বিভিন্ন দেশের সাথে আফগানিস্তানের বর্তমান বাস্তবতা সরাসরি শেয়ার করার সুযোগ তৈরি হবে। ফলে যে কোনো উদ্বেগ সমাধানের সুযোগ উন্মুক্ত হবে।

আফগান মুখপাত্র বলেন, ইসলামিক আমিরাত স্পষ্টভাবে এই ধরনের দাবি প্রত্যাখ্যান করছে। আফগানিস্তানের ভূখন্ড অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে না বা আফগানিস্তানে বর্তমানে কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতি নেই বলে তিনি তার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ভিত্তিহীন উদ্বেগ ও অভিযোগ উত্থাপন করার পরিবর্তে বিশ্বের উচিত ইসলামিক আমিরাতের সাথে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্বেগগুলো সরাসরি শেয়ার করে ইতিবাচকভাবে জড়িত হওয়া, মিডিয়া বা পাবলিক বিবৃতির মাধ্যমে নয়।

গত বছরের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেওয়ার পর এক বছর পার হয়ে গেলেও কোনো দেশই বর্তমান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে পাকিস্তান আফগানিস্তানকে নানা ধরনের সহযোগিতা করে এসেছে। তালেবান প্রশাসনের সাথেও তাদের সম্পর্ক মোটামুটি ভালো। তারপরও অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে তারা এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি দেয়নি।

এছাড়া শাহবাজ শরিফের সরকার আসার পর থেকে পাকিস্তানের সাথে আফগানিস্তানের সম্পর্ক কিছুটা শিথিল হয়েছে। কিছুদিন আগে তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি ইস্যুতে আফগানিস্তানকে দায়ী করে পাকিস্তান।

অন্যদিকে আফগানিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেএম) প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহারের উপস্থিতি নিয়েও কথা বলেছে পাক সরকার। তারা ওই ব্যক্তিকে পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করতে বলে। অন্তর্র্বর্তী আফগান সরকার এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে যে, আফগান মাটিতে মাসুদ আজহারের কোনো উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।