তুরস্কের সমালোচনায় গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী

গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাইকোস ডেনডিয়াস বলেছেন, গ্রিস সবসময়ই আর্মেনিয়ার স্বশাসন, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সমর্থন করে। কয়েকদিন আগে আর্মেনিয়ার ভূখণ্ডে আজারবাইজানের সামরিক বাহিনীর গোলাবর্ষণের প্রসঙ্গে বলেছি, আমরা রাষ্ট্রীয় সীমান্তকে অলঙ্ঘনীয় মনে করি। তুরস্ক এখানে পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।

গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাইকোস ডেনডিয়াস ও আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরারাত মীরজোয়ান

নাইকোস ডেনডিয়াস গতকাল ইয়েরেভানে আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরারাত মীরজোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার এ সফরকে তুর্কিবিরোধী কূটনৈতিক জোট গড়ার প্রয়াস হিসেবে দেখছেন অনেকে।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এককালে তুর্কি শাসনে থাকা দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধনের কথা উল্লেখ করেন। এগারো শতকে সেলজুক তুর্কদের হাতে বাইজান্টাইন বাহিনীর পরাজয় ও সম্রাট রোমানোস ডিওজিনিসের বন্দী হওয়া এবং পনের শতকে অটোমান বাহিনীর হাতে কনস্টান্টিনোপলের পতনের প্রসঙ্গে এনে তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডিগুলো আমাদের একসঙ্গে এনেছে। গ্রিক পার্লামেন্ট ১৯৯৬ সালে আর্মেনীয় গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আর্মেনীয় পার্লামেন্ট ২০১৫ সালে গ্রিক ও অ্যাসিরিয়ানদের হত্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নাগর্নো-কারাবাখ ইস্যুতে আমরা আন্তর্জাতিক আইনের রূপরেখার অধীনে পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য সমাধান চাই। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পেশিনিয়ান শান্তির স্বার্থে যে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন, আমরা তাকে সমর্থন করি।

আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈঠকে উভয়পক্ষ ককেসাস ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও ইইউ-আর্মেনিয়া সহযোগিতার বিভিন্ন দিক আলোচনা করেছে।

এর আগে গত সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে নিউইয়র্কে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেন গ্রিস, আরমেনিয়া ও সাইপ্রাসের প্রতিনিধিরা। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী পেশিনিয়ান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সুরেন পাপিকিয়ানের সঙ্গেও বৈঠক করেন গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সীমান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী দেশগুলো এক জটিল কূটনৈতিক সমীকরণে জড়িয়েছে। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান স্পষ্টভাবে বলেছেন, তুরষ্ক সর্বাবস্থায় আজারবাইজানের পক্ষে থাকবে।

তুরস্কের মতো ‘সর্বাবস্থায় পক্ষে থাকার’ কথা না বললেও ইরান সরকার নাগর্নো-কারাবাখ ইস্যুতে আজারবাইজানের পক্ষ সমর্থন করেছে। তবে আজারবাইজান যদি কোনোভাবে নাগর্নো-কারাবাখের বাইরে আর্মেনিয়ার কোনো এলাকা দখল এবং আর্মেনিয়ার সঙ্গে ইরানের স্থল যোগাযোগের পথ বন্ধ করে, তবে ইরান সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে বলে হুমকি দিয়েছে।

ইরানের বিপ্লবী গার্ড কোর গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে বলেছে, ককেসাস অঞ্চলে ইরানের সীমান্তের কাছে যে কোনো যুদ্ধ আমাদের যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত। আজারবাইজান-আর্মেনিয়া সংঘাত কোনদিকে মোড় নেয়, তার পূর্বপ্রস্ততি হিসেবে ইরান এরইমধ্যে দুই দেশের সঙ্গে নিজ সীমান্ত এলাকায় ৪৫ হাজার সৈন্য মোতায়েন রেখেছে। এদিকে ইরানের মোতায়েন করা সৈন্যদলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে প্রতিদিন আর্মেনিয়া-ইরান সীমান্তের কাছে ড্রোন ওড়াচ্ছে তুরস্ক।