নোবেল জয়ী ৫ জন বিতর্কিত ব্যক্তি

অক্টোবর মাসকে নোবেলের মাস বলা যেতে পারে। চলছে নোবেল পুরস্কারের মৌসুম। সুইডিশ একাডেমি কাদের নোবেল পুরস্কার দিচ্ছে এই ব্যাপারে মিডিয়া থেকে শুরু করে জনসাধারণেরও রয়েছে ব্যাপক কৌতুহল। প্রতি বছরই নোবেল পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। কারণ অনেক বিতর্কিত ব্যক্তিকে মর্যাদাবান এই পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় যা তাদের প্রাপ্য না।

চলছে নোবেল পুরস্কারের মৌসুম।

এরকম বিতর্কিত ৫জন নোবেল বিজয়ীর নাম নীচে দেয়া হলো:

১. অং সান সুচি

মিয়ানমারের সাবেক নেত্রী অং সান সুচি ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। মিয়ানমারে গণতন্ত্র রক্ষায় সংগ্রামের জন্য তাকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়।

নোবেল পাওয়ার দুই দশকের বেশি সময় পার করে তিনি যখন ক্ষমতাসীন হন, তখন রোহিঙ্গাদের উপর সংঘটিত গণহত্যার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেননি। ফলে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন এককালের সম্মানিত এই নেত্রী। এমনকি অনেকেই তার নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহার করার দাবিও জানিয়েছিলেন। 

২. বারাক ওবামা

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০০৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধ বন্ধ করে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন ভেবে তাকে পুরস্কারটি দেয়া হয়েছিল। এমনকি অপ্রত্যাশিতভাবে এই পুরস্কার পাওয়ায় খোদ ওবামাও অবাক হয়েছিলেন।

অথচ তার দুই মেয়াদের শাসনামলে তিনি ইরাক এবং আফগানিস্তানে যুদ্ধ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তার সময়ে ড্রোন হামলাও বেড়ে গিয়েছিল। ২০১৬ সালে ৭টি দেশে ২৬ হাজারের বেশি বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

৩. পিটার হ্যান্ডকে

২০১৯ সালে সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান অস্ট্রিয়ার লেখক পিটার হ্যান্ডকে। কিন্তু তিনি বসনিয়ার গণহত্যাকে সবসময় অস্বীকার করে এসেছেন। এমনকি এই লেখক সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট যুদ্ধাপরাধী স্লোবোদান মিলোসেভিচের কট্টর সমর্থক। প্রসঙ্গত, ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ৩ বছর ধরে চলা বসনিয়ার যুদ্ধে ৮ হাজারের বেশি মুসলমানকে হত্যা করেছে বসনীয়-সার্ব বাহিনী।

৪. শিমন পেরেজ

১৯৯৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইৎজহাক রাবিন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিমন প্যারেজ এবং ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসের আরাফাত। মূলত মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব অবসানে অসলো শান্তি চুক্তির জন্য নোবেল পেয়েছিলেন তারা।

অথচ পেরেজকে একজন যুদ্ধবাজ নেতা বলা যেতে পারে। কারণ ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্রাগার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার। এছাড়া ১৯৯৬ সালে লেবাননের কানা গ্রামে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এর ফলে ১০৩ জন বেসামরিক লেবানিজ প্রাণ হারান।

৫. হেনরি কিসিঞ্জার:

১৯৭৩ সালে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এবং উত্তর ভিয়েতনামের লি ডাক থো যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। ভিয়েতনাম যুদ্ধ অবসানে যাতে তারা ভূমিকা রাখতে পারেন সেজন্য তাদের এটি দেয়া হয়েছিল।

অথচ যুদ্ধবিরতির আলোচনার সময়ও হ্যানয়ে বোমা হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন কিসিঞ্জার। ফলে তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। অবশ্য লি ডাক থো নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। 

হেনরি কিসিঞ্জারের মত বিতর্কিত একজন ব্যক্তিকে নোবেল দেয়ার প্রতিবাদে নোবেল কমিটির দুজন সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন।

সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড