রাশিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের তুলনা করতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র

রাশিয়া যেমন ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখল করে নিজের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে, তেমনি ইসরায়েলও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে একই কাজ করেছে। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার নিন্দা করলেও ইসরায়েলের নিন্দা করা থেকে বিরত থেকেছে। রাশিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের তুলনা করতেও নারাজ দেশটি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস দুই দেশের সামরিক বাহিনীর দখলে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের নির্যাতন সম্পর্কে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ নাভি পিল্লাইয়ের করা তুলনা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাইস বলেন, 'ইউক্রেনে রাশিয়ার পদক্ষেপ এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের আচরণের মধ্যে কোন তুলনা হয় না। আমি মনে করি এটা স্পষ্ট হওয়া দরকার যে, এই দুটি দেশের পরিস্থিতির মধ্যে গভীর পার্থক্য রয়েছে।' 

বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন (সিওআই) জানিয়েছে, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ফিলিস্তিনের যেসব ভূখণ্ড ইসরায়েল দখল করেছে সেসব এলাকায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপন করা অবৈধ। আন্তর্জাতিক আইনেও এটি অবৈধ হিসেবে বিবেচিত।

ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের তুলনা করার এই ব্যাপারটি শুরু হয়। অনেকেই এই দুটি দেশকে দখলদার হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।  

বৃহস্পতিবার(২০ অক্টোবর) গণমাধ্যমে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে নাভি পিল্লাই বলেন, ‘এই মাসের শুরুতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল সংযুক্ত করাকে রাশিয়ার অবৈধ প্রচেষ্টা হিসেবে নিন্দা করেছিল। ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলসহ ১৪৩টি দেশ এই প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে।' 

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব এবং অসংখ্য সদস্য রাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিবৃতিগুলি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে, অন্য রাষ্ট্র দ্বারা একটি রাষ্ট্রের ভূখণ্ডকে একতরফাভাবে সংযুক্ত করার যেকোনও প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং এটি অবৈধ।' 

তিনি জানান, এক্ষেত্রে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের জন্য এটি সর্বজনীনভাবে প্রয়োগ করা না হলে, জাতিসংঘের সনদের এই মূলনীতিটি অর্থহীন হয়ে যাবে।

এই বিষয়ে প্রাইস জানান, বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলের সাথে রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের এ ধরনের তুলনাকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।

তিনি বলেন, 'রাশিয়া একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রে হামলা করেছে। এটি এমন একটি রাষ্ট্র যা ক্রেমলিনের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করেনি। কিন্তু রাশিয়ার সামরিক অভিযানে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।'

ইসরায়েলের দখলদারিত্বের সঙ্গে রাশিয়ার দখলদারিত্বের পার্থক্য আছে বলেও জানান প্রাইস।

এ সময় একজন সাংবাদিক প্রাইসকে জিজ্ঞেস করেন পার্থক্যগুলির মধ্যে একটি কি এই যে ‘আপনার দৃষ্টিতে ইউক্রেন একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং ফিলিস্তিন নয়?’ প্রাইস সম্মতি জানিয়ে এটিকে মূল পার্থক্য বলে উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আক্রমণ বাড়িয়েছে। ২০২২ সালে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৪১ শিশুসহ ১৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

সূত্র: দ্য নিউ আরব