মস্কো: ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল’ করতে পারে ইউক্রেন

রাশিয়া অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো থেকে আরও বেশি আর্থিক ও সামরিক সহায়তা পেতে ইউক্রেন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে দেশটি নিজের জনগণের বিরুদ্ধে একটি ডার্টি বোমা মোতায়েন করে ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেল’ এর ধারণা ব্যবহার করতে পারে। খবর আরটি নিউজ।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা গত বৃহস্পতিবার মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কিয়েভ পারমাণবিক ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে নিজেদের অ্যাকাউন্টে আরও বেশি পশ্চিমা অর্থ এবং ইউক্রেনের জনগণের পরিবর্তে নিজেদের রক্ষার জন্য সামরিক সহায়তা লাভের চেষ্টা করছে।

জাখারোভা উল্লেখ করেন, ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই মাসের শুরুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি পূর্বনির্ধারিত পারমাণবিক হামলা চালাতে ন্যাটোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। পরে তিনি আবার বলেন, রাশিয়ার ওপর ন্যাটোর হামলা সম্পর্কে তিনি যা বলেছিলেন, তার ভুল অর্থ নেওয়া হয়েছে। তিনি প্রকৃতপক্ষেই হামলার কথা বলেছিলেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি

জেলেনস্কি সত্যিকার অর্থেই একটি পারমাণবিক সংঘর্ষ শুরু করতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে জাখারোভা বলেন, তিনি এখন পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে হাত বাড়াচ্ছেন। ভাগ্য ভালো, তার কাছে তেমন কোনো অস্ত্র নেই। তবে পরমাণু অস্ত্র না থাকলেও জেলেনস্কির সরকার একটি ডার্টি বোমা তৈরি করে নিজের দেশে হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র করছে। এটি হলে এ লড়াইয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে সরাসরি মাঠে নামানো সম্ভব হবে জেলেনস্কির পক্ষে। তবে ইউক্রেন ও তার মিত্ররা মস্কোর এ অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে। বরং তারা দাবি করছে, রাশিয়া পরমাণু হামলার কোনো প্রস্তুতি নিয়েছে বলেই ডার্টি বোমার কথা বলে নিজেদের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে।

জাখারোভা বলেন, কিয়েভ সরকার তার পৃষ্ঠপোষকদের দেখাচ্ছে, তারা যদি ইউক্রেনকে সহায়তা প্রদান অব্যাহত না রাখে, তাহলে প্ল্যান বি-তে চলে যাবে। যা পুরো বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দেখা দেবে। আমরা পশ্চিমা বিশ্নকে এই বিপজ্জনক ও বেপরোয়া ধারণা ও পারমাণবিক ব্ল্যাকমেল থেকে উদ্ভূত সমস্ত পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি। কারণ ইউক্রেনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তাতে অবর্ণনীয় ক্ষতি হবে এবং প্রচুর নিরপরাধ বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইতোমধ্যেই ইউক্রেনকে আনুমানিক চার হাজার ২৩০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাই দিয়েছে দুই হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। ইইউ নেতারা পরামর্শ দিয়েছেন, এ লড়াইয়ে ইউক্রেনের যে ক্ষতি হয়েছে, তার পুনরুদ্ধারে ইউক্রেনকে কয়েক দশক ধরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের তহবিল সরবরাহ করতে হবে। এক্ষেত্রে রুশ সম্পদ জব্দ করে এ খাতে ব্যয় করা উচিত।

জাখারোভা বলেন, ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা অনেক আগে থেকেই অর্থ হাতানোর ব্যাপারে তাদের ইচ্ছা গোপনে রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে তারা এখন কেবল এই ধরনের অফারগুলোকেই স্বাগত জানাচ্ছেন।

রুশ মুখপাত্র ইউক্রেনের নেতাদের বিরুদ্ধে তাদের দেশকে পশ্চিমা প্রতিরক্ষা ঠিকাদারদের পরীক্ষার স্থল হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়ার অভিযোগও করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকদের এর পরিণতি ভোগ করতে হবে জেনেও দেশটির নেতারা এর অনুমতি দিচ্ছেন। অথচ এর আগে বিশ্বের ভয়ানক ও অত্যাচারী শাসকরাও নিজেদের দেশের নাগরিকদের ওপর অস্ত্র পরীক্ষার এমন ঘৃণ্য অনুমতি দেননি।