ইসরায়েলের নাম শুনলেই দূর দূর করে সবাই
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই বিশ্ব সম্প্রদায়ের বর্ণিল মিলনমেলা। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে দর্শক-সমর্থকরা ছুটে আসেন নিজ দেশ ও প্রিয় দলকে সমর্থন জানাতে, ফুটবল উপভোগ করতে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম আয়োজিত বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে কাতারে জড়ো হয়েছেন সারাবিশ্বের ফুটবলমোদীরা। নানা জাতি ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনের এ আসরে এবার আরেকদফা স্পষ্ট হলো বিভিন্ন দেশের সাধারণ নাগরিকরা ইসরায়েল রাষ্ট্রের কতটা বিরাগ ও ঘৃণা পোষণ করেন। রাজনীতির ঘোরপ্যাঁচে বিভিন্ন দেশের সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়লেও দখলদার রাষ্ট্রটিকে মন থেকে মেনে নেয়নি ওইসব দেশের মানুষ।
ফ্রান্স-তিউনিসিয়া ম্যাচে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে এক দর্শক
মরক্কোর কথাই ধরা যাক। আফ্রিকার আরব ভাষাভাষী দেশটি সম্প্রতি সৌদি আরব, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দেখাদেখি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে গত বুধবার মরক্কো-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের আগে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। আল-বাইত স্টেডিয়ামের বাইরে মরক্কোর নামাঙ্কিত পতাকা হাতে ছবি তুলছিলেন কয়েকজন। এমন সময় ইসরায়েলের প্রতীক ডেভিড’স স্টার হাতে এক ব্যক্তি পাশে এসে দাঁড়াতেই মরক্কোর নাগরিকরা ছবি না তুলে হাঁটতে থাকে। পেছন থেকে ইসরায়েলের নাগরিকটি মরক্কো-ইসরায়েল চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে বলতে থাকে ‘ইউ সাইনড পিস ডিল’, ‘হেই নিউ ফ্রেন্ড’। ‘ইসরায়েল নো নো’ জবাব দিয়ে হাঁটতে থাকে মরক্কোর নাগরিকরা। ‘উই আর ফর প্যালেস্টিনিয়া’ বলেন এ দলের একজন।
লুসাইল স্টেডিয়ামের বাইরের রাস্তায় দেখা গেছে আরেক চিত্র। ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে এক ব্যক্তিকে দেখে ইসরায়েলি সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, জাতিসংঘে এ দেশের নাম কি? আরব লোকটি জবাব দেন- ফিলিস্তিন। সাংবাদিককে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনি কোন দেশের? ইসরায়েল জবাব শুনেই তিনি বলে ওঠেন, ‘ইসরায়েল ডাজ নট এক্সিস্ট।’
গত রাতে তিউনিসিয়া-ফ্রান্স ম্যাচ শেষে স্টেডিয়ামের বাইরে ‘তিউনিসিয়া ইজ বেস্ট’ বলতে বলতে টিকটকে ভিডিও রেকর্ড করছিলেন একজন। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক তিউনিসিয়ান নিজের দেশের নাম শুনে ক্যামেরার সামনে এসে বলেন, ‘ইয়েস, তিউনিসিয়া ইজ বেস্ট।’ এরপর তিনি প্রথম লোকটিকে বলেন, ‘হোয়্যার আর ইউ ফ্রম?’ জবাবে লোকটি ‘ইসরায়েল’ বলতেই ‘ওহ নো’ বলে বিদায় নেন তিউনিসিয়ান নাগরিক।
কেফিয়া পরিহিত তিনজন আরব পথচারির মন্তব্য জানতে তাদের সামনে বুম তুলে ধরেছিলেন ইসরায়েলি দৈনিক ইয়েদিয়ত আহরনোতের সাংবাদিক। আরবদের মধ্যে একজন তাকে প্রশ্ন করেন, ‘কিসের জন্য কথা বলবো?’ সাংবাদিক ‘ফর ইসসরায়েল’ বলতেই আরব লোকটি ধিক্কারসূচক ‘ওশু’ বলে ওঠেন। তার দুই সঙ্গী ‘নো নো নো আই অ্যাম স্যরি’ বলে বিদায় নেন। ভাবখানা এমন যেন ইসরায়েলের কারও সঙ্গে কথা বলতেও আপত্তি।
ইসরায়েলের টুয়েলভ টিভির এক প্রতিবেদক লুসাইল স্টেডিয়ামের বাইরে কয়েকজন দর্শকের মুখোমুখি হন। আরবী ভাষাতেই তিনি কথোপকথন শুরু করেন। প্রথমে দর্শকদের ‘ইনতা মিন লুবনান’ প্রশ্ন করলে একজন হ্যাঁ-সূচক জবাবে বলেন ‘নায়া’ম। সাংবাদিক তখন বলে ওঠেন ‘আনা মিন ইসরায়েলিয়া’। ব্যস, আর যায় কোথায়? আরবরা সোজা তাকে ছেড়ে হাঁটতে থাকেন। যেতে যেতে চিৎকার করে একজন বলেন, ‘দেশের নাম ঠিক করে বলো। ওই দেশের নাম ফিলিস্তিন। ইসরায়েল নামে কিছু নেই।’
আর্জেন্টিনা-মেক্সিকো ম্যাচের আগে এক দর্শককে ইসরায়েলি টিভির সাংবাদিক প্রশ্ন করেন- কাকে সমর্থন করবেন? ওই দর্শকের গায়ে ছিল আর্জেন্টিনা লেখা পোলো শার্ট। কিন্তু তিনি জবাবে বলেন, ‘মেক্সিকোকে সাপোর্ট করবো কারণ তারা আমেরিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিল, যেমনটা এখন ইসরায়েলে চলছে।’ আরব দর্শকের জবাব শুনে বেকুব হয়ে যান ইসরায়েলি সাংবাদিক।
হলুদ রংয়ের টি-শার্ট ও ব্রাাজিলের পতাকা হাতে স্টেডিয়ামে আসা একটি পরিবারের মুখোমুখি হয়েছিলেন হিব্রু ভাষার দৈনিক মারিভের এক সাংবাদিক। ইসরায়েলি মিডিয়া শুনেই তারা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানায়। বেচারা সাংবাদিক তখন পরিচয় লুকাতে বলেন, একুয়েডর। পরিবারের কর্তাটি তখন বলতে থাকে ‘নো নো। নো ইসরায়েল।’
ইসরায়েলের কে-টিভির সাংবাদিক তার লাইভ রিপোর্টে উরুগুয়ে থেকে আসা কয়েকজন দর্শকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।’ মুখের সামনে মাইক ধরতেই উরুগুয়ের দর্শক বলে ওঠেন, ‘ভিভা প্যালেস্টাইন’ অর্থাৎ ফিলিস্তিন দীর্ঘজীবী হোক।
জাপানি এক দর্শককে ইসরায়েলি টিভির সাংবাদিক প্রশ্ন করতে গেলে তিনি পাল্টা করেন, ‘হুইচ চ্যানেল ইজ দিস?’ ‘ইসরায়েলি চ্যানেল’ জবাব শুনেই ভদ্রমহিলা হাঁটতে থাকেন। পেছন থেকে সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, ‘ইউ ডোন্ট লাইক আস?’ উত্তরে জাপানি নারী তাকে বলেন, ‘স্যরি, নো।’
কাতারে বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে ইসরায়েলি সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকদের হেনস্থা হবার অন্তত একশ ঘটনার ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার হচ্ছে। ইসরায়েল থেকে প্রায় তিন হাজার দর্শক এসেছেন বিশ্বকাপের বিভিন্ন ম্যাচ দেখতে। ইসরায়েল রাষ্ট্র ও নামের প্রতি এমন ঘৃণা দেখতে পেয়ে তেল আবিবের কর্মকর্তারা কাতারে আসা নাগরিকদের বিশ্বকাপের ভেন্যুর আশেপাশে সতর্কভাবে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছেন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.