আফগান বাহিনীর পরাজয়ে হতাশ বাইডেন, ছিলেন ঘুমহীন

তালেবান হামলার মুখে আফগান সেনাবাহিনীর গুটিয়ে যাওয়া দেখে তাজ্জব বনে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। একই সময়ে ওই দেশ থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের ঘটনা তাকে ভীষণ দুঃখিত করে। সবাই বলছিল তিনি পরিস্থিতি সামলাতে পারেননি। তীব্র হতাশা, দুঃখবোধ এবং সেইসঙ্গে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ বাইডেন ঘুমাতে পারতেন না। বাইডেন প্রশাসনকে নিয়ে নতুন এক বইয়ে এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন লেখক ক্রিস হুইপল।

আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের দিনগুলোয় ঘুমাতে পারতেন না বাইডেন

দ্য ফাইট অব হিজ লাইফ: ইনসাইড জো বাইডেন’স হোয়াইট হাউস শীর্ষক বইটি আগামী ১৭ জানুয়ারি প্রকাশ হবে। এতে বাইডেন প্রশাসন সম্পর্কে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য হাজির করেছেন ক্রিস হুইপল। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের আমলের বিভিন্ন স্মারক দেখে বাইডেনের রেগে যাওয়া, ক্ষমতাগ্রহণের পরপর সীমান্তে শরণার্থীর ঢল নামার খবরে ক্ষোভ, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে এখনও অপরিণত মনে করা, কমলা হ্যারিসকে রগচটা অভিহিত করে তার অধীনস্তদের মন্তব্য, রুশ জেনারেলদের হত্যার জন্য ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য সরবরাহের কথা জানিয়েছেন মার্কিন এ লেখক।

হুইপল লিখেছেন, ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান হামলার মুখে আফগান সেনাবাহিনীকে মাত্র কয়েকদিনে গুটিয়ে যেতে দেখে বাইডেন তাজ্জব বনে যান। পরিস্থিতি বিবেচনায় আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় মার্কিন সৈন্যরা আফগানিস্তানের মাটিতে থাকা পর্যন্ত বাইডেন কদাচিত ঘুমাতেন। প্রেসিডেন্টের এক ঘনিষ্ট বন্ধু আমাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

পরিস্থিতি তুলে ধরে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা বলেন, আপনি একের পর এক গোয়েন্দা তথ্য পাচ্ছেন এবং দম আটকে রাখছেন। রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছেন। প্রার্থনা করছেন যেন আপনার মানুষগুলোর কিছু না হয়।

আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের শেষ দিনগুলোয় কাবুলে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩ মার্কিন সেনা নিহত হয়। নিহতদের মরদেহ ডোভার এয়ার ফোর্স ঘাঁটিতে আনা হয়। বাইডেন ও তার স্ত্রী ফার্স্টলেডি জিল বাইডেন মরদেহ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যোগ দেন। নিহত এক সৈনিকের ভাই অনুষ্ঠানে বাইডেনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আশা করি আপনি যেন নরকের আগুনে জ্বলেন।

হোয়াইট হাউসের সাবেক প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি হুইপলকে জানান, ডোভার ঘাঁটি থেকে ফিরে আসার পর কয়েকদিন বাইডেনের মন খুব খারাপ ছিল। বিষয়টা এমন যেন সবাই তাকে ভুল বুঝছে। বাইডেনের ছেলে বু বাইডেন একসময় সেনাবাহিনীতে ছিলেন। পরে ব্রেন ক্যান্সারে মারা যান। নিজের প্রথম স্ত্রীকে হারিয়েছেন বাইডেন। স্বজনহারা মার্কিন নাগরিকদের সঙ্গে আলাপ জমাতে, সান্ত্বনা জোগাতে বাইডেন প্রায়ই নিজের স্ত্রী-সন্তান হারানোর দুঃখের কথা বলেন। তবে ডোভারের অনুষ্ঠানে বাইডেন নিজের ছেলের কথা বলায় বিষয়টিকে সহজভাবে নেননি নিহত ১৩ সৈনিকের স্বজনেরা। তাদের মতে, কাবুলে বোমা হামলার ঘটনা ছিল ভিন্ন।

আফগানিস্তান থেকে চূড়ান্তভাবে সৈন্য প্রত্যাহারের আগে বাইডেন তার এক বন্ধুকে বিষয়টি জানান। বন্ধুর কাছে তিনি জানতে চান, আমি কি খারাপ করছি? জবাবে বন্ধুটি বলেন, তুমি দারুণ করছ। শুনে বাইডেন মন্তব্য করেন, এরপরও সংবাদমাধ্যম আমার সমালোচনা করবে। যা-ই বলি, তারা আমার পিঠের ছাল তুলবে।

আফগানিস্তান ও ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টি একরকম কিনা জানতে চেয়েছিলেন এক সাংবাদিক। বাইডেন তখন বলেন, কখনোই না। দূতাবাসের ছাদের উপর থেকে হেলিকপ্টারে মার্কিন সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে কিছুরই তুলনা চলে না।

বাইডেনের এমন জবাব শুনে হোয়াইট হাউসের এক কর্মী বিরক্ত হন। তিনি হুইপলকে বলেন, প্রেসিডেন্ট খুব বোকার মত কথা বলেছেন। কারণ আমরা প্রতিদিনই কাবুলের মার্কিন দূতাবাস থেকে হেলিকপ্টার ওড়াচ্ছি।