ব্রিটিশ মন্ত্রীদের গাড়িতে চীনা ট্র্যাকিং ডিভাইস!

ব্রিটেনের একটি সরকারি গাড়িতে গোপন চীনা ট্র্যাকিং ডিভাইস পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রী ও কূটনীতিকরা গাড়িটি ব্যবহার করতেন। স্পাইওয়্যার নিয়ে উদ্বেগের জেরে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা সরকারি গাড়ির বিভিন্ন অংশ খুলতে গিয়ে গোপন ডিভাইসটি খুঁজে পান। ব্রিটেনের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। খবর আইনিউজ।

ব্রিটিশ মন্ত্রী ও কূটনীতিকদের কার পুলের গাড়িতে ট্র্যাকিং ডিভাইস পাওয়া গেছে

নিরাপত্তা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের ব্যবহৃত গাড়িবহরে ঢালাও অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে ‘উদ্বেগজনক বিষয়গুলো’ বেরিয়ে এসেছে। অন্তত একটি গাড়িতে গোপনভাবে রাখা সিম কার্ড পাওয়া গেছে, যেটি ওই গাড়ির জিওলোকেশন ডেটা পাঠাতে সক্ষম।

সূত্র জানায়, গাড়ির একটি বদ্ধ অংশে জিওলোকেটিং ডিভাইস রাখা হয়েছিল। গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি ওই অংশটি চীনের এক সরবরাহকারক থেকে এনে স্থাপন করেছিল।

চীনা কর্মকর্তারা বিষয়টিকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘স্রেফ গুজব’ বলে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, আমরা স্বাভাবিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতাকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার এবং চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যে কোনো নেতিবাচক প্রচারণার দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করি।

মন্ত্রী ও কূটনীতিকদের গাড়িতে জিওলোকেটিং ডিভাইস পাবার ঘটনা জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকরা চীনা গোয়েন্দা বিভাগের তরফ থেকে পদ্ধতিগত হুমকির বিষয়গুলো জরুরি ভিত্তিতে পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

গোয়েন্দা বিভাগের দুটি সূত্র জানায়, বৈরী রাষ্ট্রগুলোর গুপ্তচরবৃত্তি মোকাবেলায় যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা জোরদারের উদ্দেশ্যে কর্মকর্তারা সরকারি কিছু গাড়ি ইচ্ছাকৃতভাবে খুলেছিলেন। চীনের ট্র্যাকিং সিম রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তারা গাড়ির বিভিন্ন অংশ খুলে ঢালাও তল্লাশি চালান। প্রথম দফায় মন্ত্রী ও কূটনীতিক পরিবহনে নিয়োজিত গাড়িগুলোয় তল্লাশি চালানো হয়।

একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, অনুসন্ধানে যে সিম পাওয়া গেছে সেটি গাড়ির অবস্থান ও চলাচল সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য চীনা সরবরাহকারকের কাছে পাঠাতে সক্ষম। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব একটি প্রতিষ্ঠান ওই ডিভাইস সরবরাহ করেছিল।

তিনি বলেন, আমরা রীতিমতো অস্ত্রোপচারের মতো গাড়ির প্রতিটি অংশ এমনকি নাট-বল্টু খুলেছি। তখনই উদ্বেগজনক বিষয়গুলো বেরিয়ে আসে। এসব গাড়ির সিম মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সরকারি গাড়ির মুভমেন্ট সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে পারে, যার ভিত্তিতে সরকারি কর্মকাণ্ড ও তৎপরতার চিত্র দাঁড় করানো সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, চীনা ও রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্রিটিশ মন্ত্রীদের টার্গেট করছে এ মর্মে উদ্বেগের ভিত্তিতে গাড়িতে অনুসন্ধান শুরু হয়। ধীরে ধীরে পদ্ধতিগত উপায়ে গাড়ির চলাচল ও অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে আপনি একটি চিত্র দাঁড় করাতে পারেন। এটাই নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ।

ট্র্যাকিং ডিভাইস পাবার খবরে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির এমপি স্যার ইয়ান ডানকান স্মিথ বলেন, আমাদের সবার প্রতি চীন কি ধরণের হুমকি পোষণ করে সে বিষয়ে সরকারের আর কত প্রমান পাবার দরকার আমি জানি না। চীনকে এখনই পদ্ধতিগত হুমকি বিবেচনা করা উচিত।

একটি গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, গাড়ির ইঞ্জিনের মসৃণ কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল ইউনিট (ইসিইউ) প্রধানতঃ চীনের বিভিন্ন কোম্পানি থেকে সংগ্রহ করেন গাড়ি প্রস্তুতকারকরা। ইসিইউ থাকে বদ্ধ বা সিলড অবস্থায়। চীনা কোম্পানিগুলো সরবরাহের আগে ইসিইউতে সিম সংযোজন করে।