যুক্তরাষ্ট্রের সেই সিদ্ধান্তে আজ ভুগছে ইউক্রেন!

১৯৯১ সালে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। সে সময় উত্তরাধিকার সূত্রে বিশাল এক অস্ত্রভাণ্ডার পেয়েছিল ইউক্রেন। কিন্তু এসব অস্ত্র রাশিয়ার কাছে ফেরত দিতে বাধ্য করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। সাম্প্রতিক হামলায় সেসব অস্ত্র দিয়েই ইউক্রেনকে তুলোধুনো করছে রাশিয়া। খবর আলজাজিরা।

হোয়াইট সোয়ান

জানা যায়, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাগাভাগির সময় কিয়েভ যে বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার পায়, তার মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রসহ ১৯টি হোয়াইট সোয়ানও অন্তর্ভুক্ত ছিল। উত্তর ইউক্রেনের প্রিলুকি ঘাঁটিতে রাখা ছিল এসব হোয়াইট সোয়ান। ‘হোয়াইট সোয়ান’ নামে পরিচিত টিইউ-১৬০ একাধারে পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী এবং দ্রুতগতির সুপারসনিক বোমারু বিমান। মাটি থেকে ২০ কিলোমিটার ওপর দিয়ে এটি ডজনখানেক কেএইচ-৫৫ নিউক্লিয়ার মিসাইল নিয়ে অনায়াসে চলতে পারে। এত ভারি হওয়া সত্ত্বেও শক্তিশালী এই বিমান একবারে অর্ধেক পৃথিবী ঘুরে আসার সক্ষমতা রাখে। ভাগাভাগিতে এমন দুটি বোমারু বিমান পেয়েছিল রাশিয়া।

ইউক্রেনসহ অন্যান্য নতুন রাষ্ট্রের হাতে এসব অস্ত্র চলে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। তারা হিসেব অনুযায়ী, এসব নতুন রাষ্ট্র অনেকটাই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। ফলে তাদের হাতে থাকা পরমাণু অস্ত্র দুঃশ্চিন্তায় ফেলে দেয় পশ্চিমা বিশ্বকে। পরে তাদের চাপেই নতুন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলো হাজার হাজার পারমাণবিক অস্ত্র মস্কোকে ফেরত দেয়।

এখন পশ্চিমা বিশ্বের উদ্বেগের কারণ এই হোয়াইট সোয়ান

পশ্চিমা কূটনীতির শিকার হয়ে ১৯৯১ সালে কিয়েভ জানিয়েছিল, ১০ বছরের মধ্যেই তারা ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী সব বোমারু বিমান ছেড়ে দেবে। বাকি পরমাণু অস্ত্রগুলোও তারা ধ্বংস করবে। মজার বিষয় হচ্ছে, সে সময় এসব অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, ধ্বংস করার জন্য সরাসরি অর্থায়ন করে ওয়াশিংটন।

এর মধ্যে ১৯৯০ দশকের শেষ দিকে কিয়েভের কয়েক মিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের অংশ হিসেবে ৫৭৫টি কেএইচ-৫৫ সাবসনিক এবং ৩৮৬টি কেএইচ-২২ ক্ষেপণাস্ত্রের বড় একটি চালান নিজেদের কব্জায় নিয়ে নেয় রাশিয়া। কেএইচ-৫৫ সাবসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো হোয়াইট সোয়ানে ব্যবহার করা হয়।

জানা গেছে, মস্কোর হাতে বর্তমানে এমন ১৬টি হোয়াইট সোয়ান আছে। যুক্তরাষ্ট্রের মোকাবেলায় বিশ্বের নানা দেশে তারা এই হোয়াইট সোয়ান ব্যবহার করেছে। আর গত বছরের মার্চ থেকে এই বোমারু বিমানগুলোই ইউক্রেনে নরক গুলজার করছে। ইউক্রেনের এক সময়ের অস্ত্র দিয়ে খুব সহজেই তারা ইউক্রেনকে টার্গেট করছে।

ইউক্রেনের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত একটি এলাকা পরিদর্শন করে সেখানে কেএইচ-৫৫ সাবসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভগ্নাংশ খুঁজে পান। নিউক্লিয়ার অস্ত্র বহনে এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার হয়। এটি এক সময় ইউক্রেনের অস্ত্র কারখানায় তৈরি করা হয়েছিল। পরে ৯০ এর দশকে রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।