ইসরায়েলে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে বরখাস্ত করল ব্রাজিল

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভা ইসরায়েলে নিযুক্ত তার দেশের রাষ্ট্রদূত গারসন মেনান্দ্রো গার্সিয়া দো ফ্রেইতাসকে বরখাস্ত করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে সাবেক প্রেসিডেন্ট জেয়ার বলসোনারোর একপেশে নীতি থেকে সরে আসার বার্তা দিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আগের মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ফিলিস্তিন সফর করেন লুলা দা সিলভা

ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, রাষ্ট্রদূত গারসন মেনান্দ্রো গার্সিয়া দো ফ্রেইতাসকে তেল আবিবে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পৃথক বিবৃতিতে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত ও নিউইয়র্কে নিযুক্ত কনসাল জেনারেলকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

তেল আবিবে রাষ্ট্রদূত পদ থেকে ফ্রেইতাসকে সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ব্রাজিলের নতুন প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে বলসোনারোর একপেশে অবস্থান থেকে সরে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণের আভাস দিলেন। ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ফ্রেইতাসকে তেল আবিবে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেন বলসোনারো। একইসঙ্গে তিনি তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে ব্রাজিলের দূতাবাস স্থানান্তরের ঘোষণা দেন।

ইসরায়েলের ঘোর সমর্থক বলসোনারো কট্টরপন্থী রাজনীতিক বেনজামিন নেতানিয়াহুর বন্ধু হিসেবে পরিচিত। গত অক্টোবরে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বলসোনারোর স্ত্রী মিশেল ইসরায়েলের পতাকা আঁকা একটি টি-শার্ট পরে ভোটকেন্দ্রে আসেন। নেতানিয়াহু ওই নির্বাচনে বলসোনারোর প্রতি সমর্থন জানান এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান।

বামপন্থী প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা নির্বাচনের আগে থেকেই ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে ব্রাজিল আন্তর্জাতিক ফোরামে শক্ত অবস্থান নেবে বলেও তিনি ঘোষণা দেন।

গত সপ্তাহে ব্রাজিলের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা বলেছেন, তার দেশ ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থান থেকে সরে ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য নীতি অনুসরণ করবে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনকে ব্রাজিলের বন্ধু অভিহিত করে তিনি দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের আহ্বান জানান।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট পদে লুলার প্রত্যাবর্তন ফিলিস্তিনিদের আশাবাদী করেছে। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস লুলাকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ব্রাসিলিয়ায় নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকী। সেখান থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ফেরার পরই ইসরায়েল সরকার তার ভিআইপি ভ্রমণ পাস প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়।

এর আগে ২০১০ সালে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায় লুলা দা সিলভা ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সফর করেন। সেবার তিনি রামাল্লায় ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। ইসরায়েল সরকার ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছিল। ইসরায়েল সফরের সময় সেখানকার সরকারের পক্ষ থেকে ইহুদীবাদের জনক হিসেবে পরিচিত থিওডর হারজেলের সমাধি সফরের অনুরোধ করা হলে লুলা তাতে অস্বীকৃতি জানান।

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের ঘোর বৈরী দেশ ইরানের সঙ্গেও লুলা দা সিলভার সম্পর্ক দারুণ। আগের মেয়াদ ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৯ সালে তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমদিনেজাদকে ব্রাজিলে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।

পূর্ববর্তী মেয়াদ লুলার সরকার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ব্রিকস জোটের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য ব্রাজিল লাতিন অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি। ব্রাসিলিয়ায় ক্ষমতার আসনে লুলার প্রত্যাবর্তন ফিলিস্তিনের প্রতি লাতিন অঞ্চলের কূটনৈতিক সমর্থন জোরদার করবে।