মার্কিন যুদ্ধ ল্যাবে পরিণত হয়েছে ইউক্রেন!

প্রায় ১১ মাস ধরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলছে। এখন পর্যন্ত এর জড়িত পক্ষগুলোর মধ্যে থামার কোনো নামগন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে ইউক্রেনকে সহায়তাকারী যুক্তরাষ্ট্র কিছুদিন পরপরই ইউক্রেনের জন্য বড় আকারের সামরিক সাহায্য ঘোষণা করছে। ফলে ইউক্রেনও পর্যাপ্ত অর্থ হাতে পেয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে সমান তালে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে একটি সত্যিকারের যুদ্ধ ল্যাব হিসেবে ব্যবহার করছে। খবর সিএনএন।

ইউক্রেনে নিজেদের অস্ত্রগুলো পরীক্ষা করে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা এবং পেন্টাগন কর্মকর্তাদের তথ্য ও মতামতের উদ্ধৃতি দিয়ে সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অস্ত্রের জন্য একটি পরীক্ষাক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ইউক্রেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত পরিকল্পনার জন্য এটি পুরোপুরি একটি গবেষণা কেন্দ্রের ভূমিকা পালন করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি যুদ্ধ ল্যাব বলতে যা বুঝায় ইউক্রেন এখন তা-ই। নিজেদের উদ্ভাবিত অস্ত্রগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে কিভাবে কাজ করবে সেগুলো নিবিড়ভাবে দেখতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য ভালো একটি জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউক্রেন। নিজেদের অস্ত্র পরীক্ষার পাশাপাশি বিপক্ষ যুদ্ধে জয়লাভ করতে কী কী অস্ত্র ব্যবহার করছে তা পর্যবেক্ষণেরও সুযোগ তৈরি হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে কিভাবে সস্তা ড্রোন ব্যবহার করে ব্যাপক সাফল্য লাভ করছে, সেগুলোও নিবিড়ভাবে নজরে রাখছে ওয়াশিংটন।

ড্রোনের কার্যকারিতাও পরীক্ষা করছে যুক্তরাষ্ট্র

একটি গোয়েন্দা সূত্র ব্যবহার করে সিএনএন জানিয়েছে, ইউক্রেন প্রকৃত অর্থেই একটি অস্ত্র ল্যাবের রূপ ধারণ করেছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র এমন অনেক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে দিয়েছে, যার অনেকগুলোই এর আগে কোথাও ব্যবহৃত হয়নি। সেগুলো ইউক্রেনে ব্যবহার করে এসব অস্ত্রের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ফলে ইউক্রেনীয় সঙ্কট মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের জন্য সঠিক তথ্যের একটি অবিশ্বাস্য উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ ভাষ্যের সত্যতার ব্যাপারে তারা বলেন, উদাহরণস্বরূপ, সুইচব্লেড ৩০০ ড্রোন এবং একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাশিত তুলনায় কম কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। আবার হাইমার্চ মাল্টিপল রকেট লঞ্চারের ক্ষেত্রে উচ্চ হারের রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন। এম৭৭৭ হাউইৎজারে অল্প সময়ে অনেক বেশি শেল নিক্ষেপ করলে তার মেকানিজমে সমস্যা তৈরি হয়। ফলে এ ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম ভবিষ্যতে ব্যবহার করা হবে কি না তা নিয়ে সমরবিদরা পর্যালোচনা করছেন। শুধু এম৭৭৭ হাউইৎজারই নয় বরং এ রণক্ষেত্র থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে পশ্চিমা সামরিক কর্মকর্তারা বছরের পর বছর ধরে এই তথ্য অধ্যয়ন করবেন।

এদিকে অনেক আগে থেকেই রাশিয়া এ ব্যাপারে সতর্কবাতা দিয়ে আসছে। তারা বলছে, কিয়েভে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ সংঘাতকেই কেবল দীর্ঘায়িত করবে। এ অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারবে না, বরং দেশটির বেসামরিক লোকজনের মৃত্যু এবং বেসামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।