ডাইনোসরের ডিম পাওয়া গেল ভারতে

ডাইনোসরের লম্বা গলাবিশিষ্ট প্রজাতি টিটানোসরের আড়াইশোর বেশি ডিম পাওয়া গেছে ভারতে। মধ্যপ্রদেশে পাওয়া ডিমের অবস্থান থেকে বুঝা যাচ্ছে, ডাইনোসরের এই প্রজাতি দলবদ্ধভাবে বসবাস করত। তবে বাচ্চা লালনপালনের ব্যাপারে অতিকায় এই জন্তুরা তেমন যত্নবান ছিল না। বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী প্লস ওয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

টিটানোসরের একেকটি ডিমের ব্যাস ১৫ সেন্টিমিটার থেকে ১৭ সেন্টিমিটার

ভারতের বিজ্ঞানীরা মধ্য প্রদেশের থর জেলার পাথুরে এলাকায় টিটানোসরের ৯২টি নেস্টিং সাইট বা বাসস্থান খুঁজে পেয়েছেন। মোট মিলিয়ে টিটানোসরের ২৫৬টি ডিম পাওয়া গেছে এইসব জায়গায়। কিছু ডিম সম্পূর্ণ অক্ষত, কিছু ডিম ভেঙে গেছে।

নেস্টিং সাইট ও ডিমের অবস্থান থেকে বুঝা যাচ্ছে, মধ্যপ্রদেশের জবলপুর থেকে আহমেদাবাদ পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত বিরাট এলাকাজুড়ে আজ থেকে ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে ডাইনোসরেরা ডিম পাড়ত ও বাচ্চা ফুটাত। যদিও বাচ্চা ফুটানোর বিষয়ে তারা তেমন যত্নবান ছিল না। যদি যত্নবান হতো, তাহলে এত ডিম এমনি পড়ে থাকত না।

দিল্লি ইউনিভার্সিটির গবেষকরা মধ্যপ্রদেশে টিটানোসরের ডিমের অন্তত ছয়টি প্রজাতি শনাক্ত করেছেন। এ থেকে বুঝা যায়, ভারতে টিটানোসরের বেশকিছু প্রজাতির বসবাস ছিল।

ভূতত্ত্ববিদ হর্ষ ধীমান বলেন, এতদিন ভারতের মধ্যাঞ্চলে পাওয়া কঙ্কাল থেকে ধারণা করা হচ্ছিল যে দেশে তিন প্রজাতির ডাইনোসর বাস করত। এবার স্পষ্ট হলো যে তিনটি নয়, পৃথিবীর বুকে হেঁটে যাওয়া সবচেয়ে বড় প্রাণীর তিনের বেশি প্রজাতি ভারতে ছিল।

সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়। মধ্য প্রদেশে পাওয়া ডিমগুলো ছয় কোটি ৬০ লাখ বছর আগের বলে গবেষকরা জানান।

যেসব জায়গায় ডিম পাওয়া গেছে সেখানকার গঠন দেখে মনে হচ্ছে, জলাশয়ের কাছে নরম, কাদাময় মাটির ছোট গর্তে ডিম পাড়ত ডাইনোসর। একালের কুমিরেরা একই ধরনের জায়গায় ডিম পেড়ে থাকে।

একই এলাকায় ডিম পাড়ার কয়েক ডজন জায়গা দেখে ধারণা করা হচ্ছে, ডাইনোসররাও পাখীর কয়েকটি আধুনিক প্রজাতির মতো দলবদ্ধভাবে থাকতে ও ডিম পাড়তে পছন্দ করত। তবে খুব কাছাকাছি জায়গায় অনেকে ডিম পাড়ার ফলে ডিমে তা দেওয়ার বা বাচ্চা ফুটানোর সুযোগ তাদের সবসময় হতো না।

২০১৬-২০২০ সময়কালে সরেজমিন অনুসন্ধানে ডাইনোসরের এইসব ডিম খুঁজে পান দিল্লি ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি গতকাল বুধবার বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী প্লস ওয়ানে প্রকাশিত হয়েছে।

দিল্লি ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্বের অধ্যাপক গুন্টুপল্লী ভি. আর. প্রসাদ বলেন, টিটানোসর ছিল বিশাল আকারের প্রাণী। খুব কাছাকাছি থাকা অনেকগুলো ডিমের মধ্যে চলাফেরা করা বয়স্ক টিটানোসরের পক্ষে সম্ভব ছিল না। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, বাচ্চার লালন-পালনের বিষয়টি এসব ডাইনোসরের মধ্যে ছিল না। ছানাগুলো নিজেরাই নিজেদের খাবার জোগাড় করত।