ফিলিপাইনে এক কেজি পেঁয়াজ ১৩৬০ টাকা!

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বীপদেশ ফিলিপাইনে রীতিমতো দুর্লভ হয়ে উঠেছে পেঁয়াজ। আবার যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তার দামও আকাশছোঁয়া। সরকারি তথ্যমতে, দেশটিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ পেসোতে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৩৬০ টাকার সমান। খবর বিবিসি।

পেঁয়াজ বিলাসী পণ্য হয়ে উঠেছে

বাজারদর অনুযায়ী দেশটিতে এখন এক কেজি পেঁয়াজের দাম এক কেজি মাংসের দামের চেয়ে বেশি। আবার সরকার স্বীকৃত একজন শ্রমিকের যে দৈনিক মজুরিসীমা রয়েছে সেটাও এক কেজি পেঁয়াজের দামের চেয়ে কম। ফলে ফিলিপাইনের সাধারণ মানুষ এখন পেঁয়াজকে বিলাসী পণ্য হিসেবেই বিবেচনা করছেন। এবং যতটুকু না হলেই নয়, কেবল ততটুকু পেঁয়াজই ব্যবহার করছেন।

অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে উঠেছে যে, বিদেশ থেকে আসার সময় ফিলিপাইনের নাগরিকরা লাগেজে লুকিয়ে পেঁয়াজ নিয়ে আসছেন। সম্প্রতি এক যাত্রীকে পেঁয়াজসহ বিমানবন্দরে আটক করা হয়। শুল্ক কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছিলেন, পেঁয়াজ আনায় ওই যাত্রীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করা হবে না। তবে অনুমতিবিহীন পণ্য বহনের কারণে তারা যাত্রীদের সতর্ক করেছিলেন।

ফিলিপাইনে পেঁয়াজসহ আটক যাত্রী

দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় কেবু শহরে একটি পিজ্জার দোকানের মালিক রিজালদা মাউনেস বলেন, আমার ব্যবসাতে পেঁয়াজ খুবই প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। কিছুদিন আগেও আমি দোকানের জন্য প্রতি দিন ৩-৪ কেজি পেঁয়াজ কিনতাম। এখন আধা কেজি পেঁয়াজে আমার দিন চালাতে হচ্ছে। এ কারণে ফিলিপাইনজুড়ে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় একটি নোটিস খুবই চোখে পড়ছে, তাতে লেখা রয়েছে, কাটা পেঁয়াজ দেওয়া সম্ভব নয়।

রিজালদা বলেন, পেঁয়াজ না দিলেও ক্রেতারা তেমন অভিযোগ করছেন না। কারণ তারা নিজেদের বাসাবাড়িতেও তো একই সংকটে ভুগছেন।

দেশটির অর্থনীতিবিদ ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২২ সালে বেশ কয়েকটি বড় বড় ঝড় মোকাবেলা করতে হয়েছে ফিলিপাইনকে। এর পাশাপাশি বৃষ্টি-বন্যার মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রভাবে কৃষি উৎপাদনে ধস নেমেছে। ফলে দেশজুড়ে শুধু পেঁয়াজ নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রেও কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে ফিলিপাইন।

রাজধানী ম্যানিলাভিত্তিক আইএনজি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ নিকোলাস মাপা গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে যে খাদ্য সংকট শুরু হতে যাচ্ছে, তা গত বছর আগস্টেই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। ওই পূর্বাভাসের তিন মাসের মধ্যে দুটি শক্তিশালী ঝড় আঘাত হানে ফিলিপাইনে। এসব ঝড়ে শীতকালীন আবাদ প্রায় পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। আর এর প্রতিক্রিয়াতেই দুর্মূল্য হয়ে উঠেছে পেঁয়াজসহ বিভিন্ন মসলা ও শাক-সবজি।

গত ডিসেম্বরে যে দামে খাদ্যপণ্য বিক্রি হয়েছে দেশটিতে, তা ছিল গত ১৪ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এ অবস্থা মোকাবেলায় চলতি মাসের শুরুর দিকে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্ডিনান্ড মার্কোস জুনিয়র। এর পাশাপাশি দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে লাল ও হলুদ পেঁয়াজ আমদানিরও অনুমোদন দেন তিনি।